দ্রুত সময়ে তিস্তা চুক্তি করতে ভারতের উদ্যোগ চান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

দুই দেশের ঐকমত্যের ভিত্তিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি করার উদ্যোগ নিতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2021, 06:07 PM
Updated : 1 Dec 2021, 06:07 PM

বুধবার বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে এক আলোচনায় তিনি বলেন, তিস্তা নদীর উপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষের দুভোর্গ দূর করতে এবং জীবিকা রক্ষায় ২০১১ সালের খসড়া চুক্তির আলোকে বাংলাদেশের পানির যথাযথ হিস্যা পাওয়া প্রয়োজন।

”এই চুক্তিকে দ্রুত সময়ে শেষ করতে ভারতের আন্তরিক প্রতিশ্রুতি ও অব্যাহত পদক্ষেপের উপর বিশ্বাস রাখছে বাংলাদেশ।”

একইসঙ্গে ফেনী, গোমতী, কুশিয়ারা, মহুরীসহ অন্যান্য অভিন্ন নদীর পানিবণ্টানে চুক্তি করার উপর জোর দিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, “যাতে বাংলাদেশের মানুষ বুঝতে পারে, বাংলাদেশি জনগণের প্রয়োজনের প্রতি ভারত মনোযোগী ও স্বচ্ছ।”

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজ (আরআইএস) যৌথভাবে ’বাংলাদেশ-ভারত অংশীদারিত্বের ৫০ বছর: পরবর্তী ৫০ বছরের পানে’ শীর্ষক এ সংলাপের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে নেপালকে নিয়ে তিন দেশের জলবিদ্যুৎ ‍উৎপাদনের প্রক্রিয়া নিয়েও কথা বলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমরা বর্তমানে ভারত থেকে ১১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি। এখনো বিদ্যুতের সংকট আমাদের আছে। তৃতীয় দেশকে অন্তর্ভুক্ত করে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।”

আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশের ভূমিকার কথা তুলে ধরে শাহরিয়ার আলম বলেন, “সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শূন্য সহিষ্ণুতার দৃঢ় নীতি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসিত হয়েছে, ভারত থেকেতো অবশ্যই।

”আমাদের প্রচেষ্টা আমাদের প্রতিবেশীকে তার শান্তি রক্ষায় সহায়তা করছে, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে।”

পরস্পরের জন্য ‘লাভজনক’ এই সম্পর্ক এ অঞ্চলের দারিদ্র্য মোকাবেলা, বৈষম্য ও অসাম্য রোধ করতে ‘উদাহরণ সৃষ্টিকারী’ ভূমিকা রাখতে পারে এবং মানুষের জীবন-জীবিকার পরিবর্তন আনতে পারে বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বিশ্বাস।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে রপ্তানিযোগ্য পণ্যে ভারত শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়ায় গত এক দশকে রপ্তানি অব্যাহতভাবে বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে রপ্তানি বেড়েছে ৭০ শতাংশ। এটা আরও বাড়াতে ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাধা দূর করা দরকার।

বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি দুদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর জোর দেন সিপিডির চেয়ারপার্সন অধ্যাপক রেহমান সোবহান।

তিনি বলেন, বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য নদী পথগুলোকে সচল করার উদ্যোগ নিতে হবে। স্থল ও নদীবন্দরের সাথে সংযোগ তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে।

ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ‘লজিস্টিকস’ হচ্ছে বড় সমস্যা। একটিমাত্র বন্দর দিয়ে যদি পণ্য আনা নেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে ‘স্বার্থান্বেষী মহল’ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে। ‘লজিস্টিকস’ সমস্যা বেনাপোলকেন্দ্রিক পণ্য ব্যবস্থাপনাকে জটিল করে তুলছে।

রেলওয়ের মাধ্যমে ভারত থেকে পণ্য আমদানি শুরু হলেও বাংলাদেশ প্রান্তে পণ্য খালাসের সুযোগ কম থাকায় তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল বলে মন্তব্য করেন হাই কমিশনার।

দিল্লি-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড ইনফর্মেশনের (আরআইএস) অধ্যাপক প্রবীর দে বলেন, “কেবল রাজধানীর সাথে নয়, রাজ্যগুলোর সাথে বাণিজ্য বাড়াতে পারে বাংলাদেশ। তাহলে ব্যবসায় বড় পরিসরে বাড়তে পারে।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ভালো করছে, অনেক মানোন্নয়ন হয়েছে। তবে, ওষুধসহ বিভিন্ন পণ্যের মাধ্যমে এটা বিকশিত হতে পারে। কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতির ‍সুযোগ রয়েছে।

ঢাকায় ভারতের সাবেক হাই কমিশনার বীনা সিক্রি বলেন, দুদেশের জনগণের মধ্যে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে যেসব ‘সন্দেহ ও অবিশ্বাস’ রয়েছে সেগুলো দূর করতে উভয় দেশের সরকারকে ‍উদ্যোগ নিতে হবে। সম্পৃক্ত করতে হবে তরুণ প্রজন্মকে।

ভারতের ‘নেইবারহুড স্টাডিজের’ কেন্দ্র প্রধান শ্রীরাধা দত্ত বলেন, “মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম চলে যাচ্ছে। তবে যারা এখন তরুণ প্রজন্ম, তাদের মধ্যে ভিন্ন রকম চিন্তা রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই সময়ে পরস্পরকে সন্দেহপ্রবণ হিসাবে দেখতে পাই আমরা। আমার মনে হয়, যুবকদের এখানে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সে রকম কাজ দেখা যায়নি।”

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে আরআইএসের মহাপরিচালক ড. শচীন চতুর্বেদি, সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক আলোচনায় অংশ নেন।