মধ্যরাতে ‘শেকল ভাঙার’ পদযাত্রায় নারীরা

সাক্ষ্য আইনের বিতর্কিত ধারা বাতিলের দাবিতে মধ্যরাতে রাজধানীতে পদযাত্রা করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অর্ধশতাধিক নারী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2021, 07:58 AM
Updated : 12 Nov 2021, 11:56 AM

ঢাকার বনানীর রেইনট্রি হোটেলের ধর্ষণ মামলার রায়ে বিচারকের একটি বক্তব্য নিয়ে অধিকারকর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে এই ‘শেকল ভাঙার পদযাত্রা’ হয়।

রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ থেকে মশাল হাতে পদযাত্রা শুরু করে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে গিয়ে তারা সমাবেশে মিলিত হন।

শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার বলেন, “গৃহ, কর্মস্থল, গণপরিবহনে নারীর জন্যে নিরাপদ বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে ওই প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীরা। পুলিশ পদযাত্রায় সার্বিক নিরাপত্তা দিয়েছে।”

বৃহস্পতিবার দুপুরে রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের মামলার রায়ে আসামিদের খালাস দেয় ঢাকার একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।

বিচারক বলেন, “তারা উইলিংলি পার্টনার ছিল, তারা ধর্ষণের শিকার হয়নি।”

৭২ ঘণ্টার পর মেডিকেল পরীক্ষা করা হলে যে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না, সে কথা তুলে ধরে বিচারক পুলিশকে ওই সময়ের পরে কোনো মামলা না নিতে বলেন।

বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ও মশাল তৈরির কাজ শুরু হয়।

পরে রাতে সাক্ষ্য আইনের বিতর্কিত ধারা বাতিলসহ অন্যান্য দাবিতে পদযাত্রা শুরু হয় শাহবাগ থেকে। সংগীতশিল্পী কৃষ্ণকলি, অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

গতবছর নভেম্বরে আন্দোলনের মুখে ধর্ষণের সাজা বাড়িয়ে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন’ আইন সংশোধন করে সরকার। সেখানে ‘ধর্ষিতা’ শব্দটি বদলে ‘ধর্ষণের শিকার’ শব্দ দুটি বসানো হয়। কিন্তু সাক্ষ্য আইন সংশোধন করা হয়নি। 

সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-এর ১৫৫(৪) ধারায় ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির চরিত্র নিয়ে কথা বলার যে সুযোগ রাখা হয়েছে আইনজীবীদের জন্য। অর্থাৎ, আসামিপক্ষের আইনজীবী শুনানিতে এই যুক্তি দেখাতে পারেন যে, অভিযোগকারী সাধারণভাবে ‘দুশ্চরিত্রা’, ধর্ষণের শিকার নন।

ওই ধারা সংশোধনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন অধিকারকর্মীরা। গত ৩০ জুন আইনমনন্ত্রী আনিসুল হকও আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে পরে তা আর এগোয়নি।  

পদযাত্রায় সংহতি জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ বলেন, “কেবল নারীর নেতৃত্ব যেমন নারীর সার্বিক অবস্থায় কোনো উন্নতি করে না, তেমনি শুধুমাত্র নারী বিচারক হলেই সুচিন্তিত ও ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে এমন নিশ্চয়তা নেই।”

রায়ের পর্যবেক্ষণের নিন্দা জানিয়ে এর প্রতিবাদে ও সাক্ষ্য আইনের বিতর্কিত ধারা বাতিলের দাবিতে অন্যদের একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান এই অধিকার কর্মী।

প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ ধারার ৪ অনুচ্ছেদ বাতিলের দাবিতে গণস্বাক্ষরও আদায় করা হয়।