রেইনট্রি ধর্ষণ মামলার রায়ে বিচারকের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন অধিকারকর্মীদের

ধর্ষণের মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো রকম কালবিলম্ব চলবে না, সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকৃতিও জানাতে পারবে না- এমন ‘নীতিমালা’ যেখানে উচ্চ আদালত ঠিক করে দিয়েছে, সেখানে রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের মামলার রায়ে নিম্ন আদালতের বিচারক যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অধিকারকর্মীরা।

কাজী নাফিয়া রহমানমেহেদী হাসান পিয়াস ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2021, 07:08 PM
Updated : 13 Nov 2021, 02:59 PM

মামলার সব আসামিকে খালাস দিয়ে বৃহস্পতিবার দেওয়া রায়ের সময় ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহার পুলিশের উদ্দেশে বলেছেন ধর্ষণের ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পর মামলা না নিতে।

যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, “৭২ ঘণ্টা পর মেডিকেল টেস্ট করা হলে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় না। তাতে মামলা প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়ে।”

অথচ হাই কোর্টেরই দেওয়া এক রায়ে বলা হয়েছে, শুধু ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়ার কারণে ধর্ষণ প্রমাণ হয়নি বা আসামি খালাস পেতে পারে না। ভিকটিমের মৌখিক সাক্ষ্য ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য দ্বারা আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার ভিত্তিতেই আসামিকে সাজা দেওয়া যেতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে বিচারক কামরুন্নাহারের রায়ের পর্যবেক্ষণ উচ্চ আদালতের নির্দেশনাই শুধু নয়, সংবিধানের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না।

নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, বিচারকের এই পর্যবেক্ষণ ধর্ষণের শিকার নারীদের নিরাপত্তা যেমন হুমকির মুখে ঠেলে দেবে, তেমনি ধর্ষণকারীদের সুবিধা দেবে।

আইনজীবী জেড আই খান পান্নাসহ নারী অধিকারকর্মীরা ওই বিচারকের এই রায় চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন, এজন্য রায়ের অনুলিপি প্রকাশের অপেক্ষায় আছেন তারা।

ঢাকার এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ২০১৭ সালের ৬ মে বনানী থানায় গিয়ে একটি মামলা করেন। তাতে তিনি অভিযোগ করেন, এক মাসের বেশি সময় আগে ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের এক অনুষ্ঠানে ডেকে নিয়ে তাকে এবং আরেক তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল।

ওই তরুণীর মামলার প্রধান আসামি ছিলেন আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ। এছাড়া সাফাতের দুই বন্ধু এবং দেহরক্ষী এবং গাড়িচালককেও আসামি করা হয়। তবে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল শুধু সাফাত ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফের বিরুদ্ধে। বাকিদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল সহযোগিতার অভিযোগ।

তুমুল আলোচনার মধ্যে তখন সাফাতসহ সব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরের মাসেই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের পরিদর্শক ইসমত আরা এমি। তার পরের মাসেই আদালতে অভিযোগ গঠনের পর শুরু হয়েছিল বিচার।

ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে বের হওয়ার সময় সাফাত আহমেদদের হাস্যোজ্জ্বল মুখই বলে দিচ্ছে তিনি খালাস পেয়েছেন। বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের আলোচিত মামলাটিতে তিনিসহ সব আসামিই খালাস পেয়েছেন। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

তার চার বছর পর ২২ জনের সাক্ষ্য নিয়ে বৃহস্পতিবার রায় দেন বিচারক শামসুন্নাহার। তাতে তিনি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি উল্লেখ করে সব আসামিকে খালাস দেন।

তিনি বলেন, অভিযোগকারী তরুণী স্বেচ্ছায়ই রেইনট্রি হোটেলে গিয়ে আসামির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন বলেই প্রমাণিত হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্র দিয়ে আদালতের সময় নষ্ট করেছেন বলেও রায়ের পর্যবেক্ষণে মন্তব্য করেন এই বিচারক।

“তদন্ত কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে এ মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছেন। ভিকটিমদের ডাক্তারি রিপোর্টে কোনো সেক্সুয়াল ভায়োলেশনের বিবরণ নেই। ভিকটিমের পরিধেয়তে পাওয়া ডিএনএ নমুনা আসামিদের সঙ্গে মিলল না। … ৩৮ দিন পর এসে তারা বললো ‘রেপড হয়েছি’, বিষয়টি তদন্ত কর্মকর্তার বিবেচনা করা উচিৎ ছিল।”

রায় হচ্ছে কোনো একটি মামলায় দণ্ড বা সাজার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত। আর রায়ের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, ওই মামলার প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিচারকের অভিমত, বিশ্লেষণ; যা বিচারক প্রত্যাহার বা বাতিল করতে পারেন। নিম্ন আদালতের রায়ের মতো পর্যবেক্ষণও উচ্চ আদালত কিংবা বাতিল করতে পারে।

আপত্তি যেখানে

নারী অধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, রায়ে আসামিরা খালাস পেতেই পারে। খালাসের রায় পুনর্বিবেচনার আইনি আরও কয়েকটি ধাপ রয়ে গেছে। তবে বিচারিক আদালত রায়ে যে পর্যবেক্ষণ এসেছে, সেটি উদ্বেগের।

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে দেশে নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা আড়ালে থেকে যায়। সেসব বাধা পেরিয়ে আইনের আশ্রয় নিতে অনেক ক্ষেত্রেই দেরি হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষণের মামলা করার নির্দেশনা এলে ভুক্তভোগীদের বিচারপ্রাপ্তি কঠিন হয়ে পড়বে।

“আমাদের দেশের নারীরা এখনও স্বাধীনভাবে চলতে পারে না। তাদের অভিভাবকরা অনেক সময় মামলা করতে দিতে চায় না। আবার অভিভাবক রাজি থাকলেও অনেক সময় পারিপার্শ্বিক সহযোগিতা, নারী অধিকারকর্মী, মানবাধিকারকর্মীদেরও পাশে থাকতে হয়। এসব কিছু মোকাবেলা করে তাকে মামলাটা করতে হয়। স্থানীয় প্রভাবশালীদের অনেক সময় চাপ থাকে।

“যে মেয়েটা ধর্ষণের শিকার হয়, সে এক ধরনের ট্রমার মধ্যে থাকে। তার অভিভাবকরাও মামলা করবে কি না, সে বিষয়টি নিয়ে দোদুল্যমানতা থাকে। যারা তাকে সাপোর্ট দিবে, তারা পৌঁছাতে পৌঁছাতে ৭২ ঘণ্টা চলে যায়।”

জ্যেষ্ঠ অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসামিদের বেকসুর খালাস নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। কিন্তু একটি জায়গায় আমি খুব মর্মাহত। কীভাবে মাননীয় বিচারক বললেন, ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টা পরে গেলে সেই মামলা যেন পুলিশ না নেয়! এটা কি উনি বলতে পারেন? কখনোই না।”

“ধর্ষণের পর ভিকটিমকে যদি ৭২ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়, তাহলে কি সে বিচার পাবে না?” প্রশ্ন করেন তিনি।

তিনি বলেন, “যখন অভিযোগ দেবে, তখনই মামলা নিতে হবে। পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও আছে। সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপনারা (বিচারক) উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানতে বাধ্য।”

ধর্ষণের অভিযোগ এলে যে কোনো থানা মামলা নেওয়ার পাশাপাশি ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নমুনা সংগ্রহ করে ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানোসহ ১৮ দফা নির্দেশনা এসেছিল উচ্চ আদালতের আরেকটি রায়ে।

মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্টের করা এক রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সেই রায় দিয়েছিল।

তাতে ধর্ষণের শিকার ভুক্তোভোগীর নিরাপত্তা, ডাক্তারি পরীক্ষা, মামলা সংক্রান্ত ১৮টি নির্দেশনা দিয়ে উচ্চ আদালত বলেছিল, যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণের শিকার নারীর বা শিশুর সুরক্ষা, নিরাপত্তা, তদন্ত ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট আইন না হওয়া পর্যন্ত এই ১৮টি নির্দেশনাকে ‘নীতিমালা’ হিসেবে গণ্য করে তা অনুসরণ করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।

সেখানে তিন নম্বর নির্দেশনাটি ছিল, কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অভিযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে বিলম্ব বা অভিযোগ নিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারবেন না।

ফাইল ছবি

রেইনট্রি হোটেলের ধর্ষণ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণ উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনাকে লঙ্ঘন করেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপ্রধান সালমা আলী।

রায় এবং রায়ের পর্যবেক্ষণ শুনে এ আইনজীবীর প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল- “আমি নিরাশ ও হতভম্ব!

“ধর্ষণের পর একজন ভিকটিম এমন ট্রমাটাইজড থাকে যে, সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে অনেক সময় লেগে যায়। এমন অনেক মামলার জাজমেন্ট দক্ষিণ এশিয়া ও বাংলাদেশে আছে, যে মামলাগুলো এক বছর পরেও নেওয়া হয়েছিল। পারিপার্শ্বিক নানা সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সেসব মামলা চলেছে।”

বিচারকের এমন পর্যবেক্ষণের সম্ভাব্য পরিণতি তুলে ধরে সালমা আলী বলেন, “যখন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, ওই সংঘবদ্ধ চক্র যদি ভিকটিমকে চার দিন আটকে রাখে, তখন কী হবে? রায়ের এ পর্যবেক্ষণের অপব্যবহার হওয়ার সুযোগ রয়েছে।”

“চিন্তাই করতে পারছি না কীভাবে এ ধরনের একটি জাজমেন্ট বিচারক দিলেন! আদালত থেকে এ ধরনের রায় আসলে নারীরা বিচার পাবে কীভাবে, তারা কোথায় যাবে? আমার মনে হয় অবিলম্বে এটি চ্যালেঞ্জ করা উচিত,” বলেন সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী।

এই রায়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানুও।

তিনি বলেন, “যেখানে হাই কোর্টের রায়ই আছে, যত দ্রুত সম্ভব যে কোনো থানায় মামলা নিতে হবে। সেই রায়ের বিরুদ্ধে এটা হয়ে গেল!”

রায়ে বিচারক বলেছেন, রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ‘উভয়পক্ষের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক’ ঘটেছে।

এ বিষয়টি নিয়ে রোকেয়া কবির বলেন, “আধুনিক যুগে এ যুক্তি ধোপে টিকে না। তাহলে বিবাহিতদের ধর্ষণ করাটা জায়েয হয়ে যায়।”

ধর্ষণ মামলার বিচারের ক্ষেত্রে মেডিকেল টেস্টের ফলাফলকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীর শারিরীক পরীক্ষায় দেরির ফলে ধর্ষণের আলামত নষ্ট হলে তা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

তবে এবছর হাই কোর্টের দেওয়া এক রায়ে বলা হয়, ডাক্তারি পরীক্ষা হয়নি বলে ধর্ষণকারী খালাস পেতে পারে না।

‘ধর্ষণ ও নির্যাতন বিরোধী বাংলাদেশ’ ব্যানারে শুক্রবার বিকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ধর্ষণবিরোধী সমাবেশে প্ল্যাকার্ড হাতে একজন। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

কেবল ডাক্তারি পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে ধর্ষণ মামলা না নিলে অন্য অনেক বিষয় বিবেচনার বাইরে থেকে যাবে বলে মনে করেন নারী নেত্রী মালেকা বানু।

তিনি বলেন, “মেডিকেল টেস্ট একমাত্র প্রমাণ না, পারিপার্শ্বিক পরিবেশও তো ধর্ষণ মামলার জন্য বড় প্রমাণ। অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ কর্মকর্তারা মামলা নিতে চায় না, নানা কারণে ঘুরায়- এখন তো আরও নেবে না।

“ধর্ষণ হলে নারীকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ কারণে অনেক সময় ভিকটিম মামলা করতে চায় না। ধর্ষণের আলামত কিভাবে রক্ষা করতে হয়, এটা কিন্তু নারীরা জানে না। নানাভাবে ভিকটিমকে মামলা না করতে প্রভাবিত করা হয়। এই প্রতিবন্ধকতাগুলো তো আছেই।”

আলোচিত এই মামলায় দুইজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আসেননি, যা সুবিচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে শঙ্কা জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

মালেকা বানু বলেন, “সাক্ষী সুরক্ষা আইন না থাকা ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে অনেক বড় বাধা। এই মামলায়ও দু্জন সাক্ষী কিন্তু আসেনি। সেই বিষয়টিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”

জেড আই খান পান্না মনে করেন, বিচারক কামরুন্নাহার উচ্চ আদালতের রায়-নির্দেশনা অগ্রাহ্য করেই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।

যে কারণে আলোচিত এ ধর্ষণ মামলার রায়ের অনুলিপি সংগ্রহ করে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।