৪৭ নাগরিকের বিবৃতি: সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় প্রশাসনের ‘নিষ্ক্রিয়তার’ কারণ খুঁজতে হবে

দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার দায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনোভাবেই এড়াতে পারে না বলে মনে করেন দেশের ৪৭ জন নাগরিক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2021, 07:18 PM
Updated : 22 Oct 2021, 07:32 PM

সহিংস এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এ ধরনের ঘটনা প্রতিহতের পরিবর্তে দোষারোপ করার ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতেও রাজনীতিবিদদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে এসব নাগরিকের যৌথ এ বিবৃতিতে।

পাশাপাশি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘নিষ্ক্রিয়তার’ কারণ কী তা খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।

শুক্রবার গণমাধ্যমে এ বিবৃতি পাঠানো হয়। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন- অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আমির-উল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, আকবর আলী খান, রাশেদা কে চৌধুরী, সুলতানা কামাল প্রমুখ।

ফাইল ছবি

দুর্গাপূজার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর ভোরে নানুয়া দীঘির পাড়ে দর্পন সংঘের পূজামণ্ডপে হনুমানের মূর্তির কোলে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন রাখা দেখে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। এরপর হামলা, ভাংচুর চালানো হয় অন্তত আটটি মন্দিরে।

এর জের ধরে সেদিনই চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মন্দিরে হামলা হয়, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় পাঁচজন। পরের কয়েকদিনে নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হয়। এসব ঘটনায় হতাহতের ঘটনাও ঘটে।

উদ্ভূত পরিস্থিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে অনতিবিলম্বে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দেশের ৪৭ জন নাগরিক এ বিবৃতি দেন।

তারা বলেন, “সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করছি, দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে যা আমাদের জন্য সতিই লজ্জাকর এবং দেশের সংহতির জন্য হুমকি স্বরূপ। এ ব্যাপারে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।”

বিবৃতিতে বলা হয়, কুমিল্লায় সংঘটিত ঘটনার পর প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও সতর্ক, সক্রিয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত ছিল। কিন্তু ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আরও সাম্প্রদায়িক হামলা হয়।

ফাইল ছবি: কুমিল্লায় একটি মন্দিরে কোরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে বুধবার নানুয়া দিঘীর পাড়ে একটি পূজামণ্ডপের ভাংচুর চালানো হয়। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

“যার দায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই নিষ্ক্রিয়তার কারণ কী তা খুঁজে বের করতে হবে। অন্যদিকে কিছু জায়গায় জড়ো হওয়া জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি বর্ষণের যে ঘটনা ঘটেছে তাতে শক্তিপ্রয়োগ পরিমিত ও আইনানুগ ছিল কিনা তাও তদন্ত করে দেখতে হবে।“

অবিলম্বে এইসব দুষ্কৃতিকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানানোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আহ্বান জানান বিশিষ্টজনরা।

বিবৃতিতে বলা হয়, অতীতে এই ধরনের অনেক সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটলেও এর কোনো বিচার হয়নি। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ঢালাওভাবে মামলা দায়ের, বিচারের নামে হয়রানি না করার এবং গ্রেপ্তার বাণিজ্যে লিপ্ত না হওয়ার অনুরোধও জানানো হয়।

সমাজের সব শুভ শক্তিকে একত্রিত করে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সকল নাগরিকের সমধিকার নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে একটি বাস্তব কর্মসূচি নেওয়ার জন্য সরকারে প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।

আরও পড়ুন