সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৮ এর এ সংক্রান্ত ধারা ৪১(১) ও ৩ সংবিধানের ২৭, ৩১ ও ৩৫(৬) অনুচ্ছেদের সঙ্গে কেন সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানাতে দেওয়া হয়েছে রুল।
কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানের রিট আবেদনে রোববার এ রুল দেয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ।
রুলে ফৌজদারি মামলার আসামি কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিনকে পদায়ন করা থেকে বিরত থাকতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং এনডিসি এস এম রাহাতুল ইসলামকে বরিশালে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পদায়ন করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চেয়েছে আদালত।
জনপ্রশাসন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিসহ মোট ৮ বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু ও ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
২০১৮ সালে প্রণীত সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অভিযোগে দায়ের করা ফৌজদারি মামলায় আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণের আগে ওই কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করতে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী আজিজুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফৌজদারি মামলার পর যে কোনো নাগরিককে পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গ্রেপ্তার করতে পারে। কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ব্যত্যয় রেখে প্রণীত ওই আইন সংবিধানের ২৭, ৩১ ও ৩৫(৬) অনুচ্ছেদের স্পষ্ট লঙ্ঘন। কোনো আইনই সংবিধানকে লঙ্ঘন করতে পারে না।
তিনি বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে এরকম একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের আদেশ সেটি বাতিল করা হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে সরকারি কর্মচারী আইনে সেই ধারাটিই সুকৌশলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে এর ব্যপ্তি আরও বাড়িয়ে।”
সরকারি চাকরি আইনে পূর্বানুমতির পাশাপাশি আরও বলা হয়েছে, যদি বিচারকারী আদালতের গোচরীভূত হয় যে, তার আদালতে বিচারাধীন কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন সরকারি কর্মচারী, তাহলে আদালত অনতিবিলম্বে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী বা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে জানাবে।
গত বছরের ১৪ মার্চ মধ্যরাতে বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুলকে জেল-জরিমানা করে প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তার আগে তাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ ঘটনায় ১৯ মার্চ আরিফুলের পক্ষে কুড়িগ্রাম সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বাংলা ট্রিবিউনের ঢাকার সিনিয়র রিপোর্টার নুরুজ্জামান লাবু।
পরে ২ এপ্রিল হাই কোর্টের আদেশে কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন, তিন ম্যাজিস্ট্রেট আর অজ্ঞাত আরও ৪০ জনের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়।
মামলায় রিগ্যান অভিযোগ করেন, ‘কাবিখার টাকায় পুকুর সংস্কার করে ডিসির নামে নামকরণ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন এবং জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তিনি। তার জের ধরেই তার উপর নির্যাতন চলে।
সুলতানা পারভীন ছাড়া অন্য যে তিন আসামির নাম এজাহারে উল্লেখ করা হয়, তারা হলেন- জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা এবং এসএম রাহাতুল ইসলাম।
ভ্রাম্যমাণ আদালতে আরিফুলকে সাজা দেওয়ার পর প্রতিবাদ শুরু করে সাংবাদিকরা। মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত করে দ্রুত পরিস্থিতির সামাল দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর আরিফ জামিনে মুক্তি পান।
তদন্তে আরিফের প্রতি অন্যায় আচরণের প্রমাণ পাওয়ায় কুড়িগ্রাম থেকে ডিসি সুলতানা পারভীনকে সরিয়েও নেওয়া হয়েছিল। সরিয়ে নেওয়া হয় নাজিম উদ্দিন, রিন্টু বিকাশ চাকমা এবং রাহাতুল ইসলামকেও।
সম্প্রতি রাহাতুল ইসলামকে বরিশালে সহকারী কমিশনার এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পদায়ন করেছে সরকার।
তবে সুলতানা পারভীনের বেতন বৃদ্ধি দুই বছরের জন্য স্থগিত করে গত ১০ অগাস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আদেশ জারি করে।