সরকারি কর্মীদের গ্রেপ্তারের আগে অনুমোদনের আইনে মন্ত্রিসভার সায়

সরকারি দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র হওয়ার আগে গ্রেপ্তারে সরকারের অনুমতি নেওয়ার বিধান রেখে আইন হচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2015, 12:06 PM
Updated : 13 July 2015, 12:08 PM

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৫’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, “আইনে গ্রেপ্তার বিষয়ে বলা আছে চার্জশিট হলে গ্রেপ্তারে কোনো সমস্যা নেই, আদালত কর্তৃক চার্জশিট গৃহীত হওয়ার আগে যদি কাউকে গ্রেপ্তারের প্রয়োজন হয়, তাহলে সরকারের অনুমোদন লাগবে।”

গ্রেপ্তারে অনুমোদনের প্রয়োজন হলেও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো অপরাধের অভিযোগ তদন্ত কিংবা মামলা দুনীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান করতে পারবে বলে জানান তিনি।

সরকারি দায়িত্ব পালনে অনিয়মে প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি ফৌজদারি মামলাও হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের নজিরও রয়েছে।  

তবে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত আইনটি সংসদে পাস হলে অভিযোগপত্রের আগে সরকারি কোনো কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না পুলিশ কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।   

এ আইনটিকে ‘যুগান্তকারী’ উল্লেখ করে জনপ্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা মোশাররাফ বলেন, অনেক বছর ধরে এ আইনটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল।

সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে রাষ্ট্রপতির প্রণীত বিধিমালা দিয়ে পরিচালিত হন। সরকারি কর্মচারীদের চাকরি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধিমালাও রয়েছে।

নতুন আইন কার্যকর হলে সেটাই প্রাধান্য পাবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

সরকারি কর্মচারীর সংজ্ঞায় প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত অনেকে থাকলেও এই আইনের আওতায় অনেকে থাকছেন না বলে জানান তিনি।

“আইনে বলা আছে কিছু ক্যাটাগরি এ আইনবর্হিভূত থাকবে। যেমন সাংবিধানিক পদে যারা অধিষ্ঠিত আছেন, জুডিশিয়াল সার্ভিসের কর্মকর্তা, সুপ্রিম কোর্ট কর্মচারী, ডিফেন্স, রেলওয়ে কর্মচারী, এডহক, সাময়িকভাবে গঠিত কোনো কমিশনের কর্মচারী, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মচারী ইত্যাদি তাদের নিজস্ব আইনে চলবে।”

“গতানুগতিকভাবে যাদেরকে সরকারি কর্মচারী বলা হয় আমাদের মতো, তারাই এ আইনে কাভার করে,” বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা (ফাইল ছবি)

এ আইন জারি হওয়ার পর এর আওতায় বিভিন্ন বিধিমালা জারি করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, তার আগ পর্যন্ত বিদ্যমান বিধিমালা বহাল থাকবে।

মোশাররাফ বলেন, “সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া আছে বিভিন্ন সার্ভিস রিস্ট্রাকচারিং করতে পারবে, তবে আইনের বিধানে বলা আছে রিস্ট্রাকচারিংয়ের কারণে কোনো কর্মচারী ব্যক্তিগতভাবে এফেকটেড হবেন না। যেমন কোনো একটি পদ ডাউনগ্রেড হয়ে গেলে বর্তমানে যিনি থাকবেন তিনি এফেকটেড হবেন না, পরে যিনি আসবেন তার জন্য হবে।”

এই আইন অনুযায়ী সরকার চাইলে স্থায়ী বেতন কমিশন ও প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন গঠন এবং বেতন পুনর্মূল্যায়ন করতে পারবে বলে জানান তিনি।

কর্মচারীদের কর্মদক্ষতার জন্য পুরস্কারের বিধান রয়েছে প্রস্তাবিত আইনে।

এ আইন বাস্তবায়নে ১০টি ক্ষেত্রে বিধির কথা বলা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “প্রথমটি হচ্ছে চাকরিতে নিয়োগ, পদোন্নতি, জ্যেষ্ঠতা, ছুটি, পদায়ন, লিয়েন এ সংক্রান্ত বিষয়ে রুলস করতে হবে।”

“ক্যাডার সার্ভিস সংক্রান্ত রুলস, শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত, অবসর সুবিধা, পদত্যাগ বা স্বেচ্ছা অবসর অথবা অক্ষমতাজনিত অবসর, পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা এবং কর্মমূল্যায়ন, ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও দক্ষতা উন্নয়ন, উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত বিধি করতে হবে।”

এছাড়া অধিকার প্রণোদনা, মৃত্যু কল্যাণমূলক বিষয়, সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অনগ্রসর সুবিধাবঞ্চিত বিশেষ জনগোষ্ঠীকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুবিধা দেওয়া এবং কোটা সংরক্ষণে বিধিও করতে হবে।

সরকারি চাকুরেদের অবসর আলাদা আইন দ্বারা পরিচালিত হবে প্রস্তাবিত আইনে বলা রয়েছে।