পরওয়ারসহ জামায়াতের নয়জন রিমান্ডে

ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলসহ নয়জনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2021, 10:24 AM
Updated : 7 Sept 2021, 02:47 PM

ভাটারা থানার ওই মামলায় পুলিশের করা ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি করে ঢাকার মহানগর হাকিম মাহমুদা আক্তার চার দিনের হেফাজতে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

সোমবার সন্ধ্যার পুলিশের একটি দল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ ওই নয়জনকে গ্রেপ্তার করে।

নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন তাদের মধ্যে।

বাকি আসামিরা হলেন- জামায়তের শুরা সদস্য ও ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য আব্দুর রব, মনিরুল ইসলাম, ইজ্জত উল্লাহ, মোবারক হোসেন ও আব্দুল কালাম।

তাদের গ্রেপ্তারের পর ঢাকার পুলিশ কমিশনার মোহা.শফিকুল ইসলাম সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “গোপন বৈঠক করার সময় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছে যেসব আলামত পাওয়া গেছে, সেগুলো রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।”

পরে ওই নয়জনের বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ। মঙ্গলবার তাদের আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ।

রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান কৌসুঁলি আবদুল্লাহ আবু বলেন, “আসামিরা জননিরাপত্তা, দেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট করা এবং অবৈধভাবে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের লক্ষ্যে গোপন বৈঠক করছিলেন। সেখান থেকে ৭৫টি লিফলেট, উগ্র মতবাদের বিভিন্ন বইপত্র, সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচলানার রেজিস্ট্রার কাগজপত্র ও ল্যাপটপ, মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

“গ্রেপ্তার আসামিদের সঙ্গে আর কারা ছিল তা জানার জন্য, নাম ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য, কী উদ্দেশ্য তাদের ছিল তা বের করার জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ জরুরি।”

রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, “তারা বিভিন্ন জঙ্গি নাশকতায় উসকানি দেন। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এ রকম কর্মকাণ্ড কাম্য হতে পারে না। দেশের সুনাগরিক হলে তারা এ রকম কাজ করতেন না। এরা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। এদের এত প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হবে না। বরং রিমান্ডে নেওয়া হবে যৌক্তিক। তাদের অর্থের জোগানদাতা কে তা জানার জন্য রিমান্ড জরুরি।”

শুনানির সময় মামলার তদন্ত কমকর্তা রিমান্ড প্রার্থী ভাটারা থানার এস আই মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বাদীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।

তার কাঠগড়ায় দাঁড়ানো নিয়ে আসামিপক্ষ প্রশ্ন তুললে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধি এবং ক্রিমিনাল রুলস অ্যান্ড অর্ডার অনুযায়ী তিনি সেখানে দাঁড়িয়েছেন। রিমান্ড বিষয়ে কোনো কিছু জানার থাকলে বিচারক তাকে প্রশ্ন করতে পারেন। 

ছবি: মাহমুদ জামান অভি

আসামিদের রিমান্ডের বিরোধিতা এবং জামিন আবেদনের শুনানিতে তাদের আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আসামি মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং হামিদুর রহমান আজাদ সংসদ সদস্য ছিলেন। অপর আসামি রফিকুল ইসলাম ছিলেন রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়ের সিনেট সদস্য। একট নিষিদ্ধ জিনিসও এদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। জামায়াত নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। এটা একটা রাজনৈতিক খেলা মাত্র। জামায়াতকে পর্যুদস্ত করার জন্য এটা একটা ঘটনা মাত্র।

“গ্রেপ্তার নয় জনের মধ্যে একজন পরওয়ার সাহেবের গাড়িচালক, আর একজন কর্মচারী। এ দুইজন ছাড়া বাদ বাকি সবাই বয়স্ক এবং অসুস্থ। আসামি রফিকুল ইসলাম খানের হৃদযন্ত্রে রিং পড়ানো, হামিদুর রহমান আজাদ করোনায় আক্রান্ত ছিলেন, আসামি মোবারক ও ইজ্জতউল্লাহর বয়স অনেক।”

এরপর আসামিদের আরেক আইনজীবী শিশির মনির রিমান্ড সম্পর্কিত উচ্চ আদালতের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত এবং সংবিধানের বিভিন্ন মৌলিক অধিকারের অনুচ্ছেদ তুলে ধরেন।

শিশির মনির বলেন, “অর্থের জোগানদাতা আমরা সবাই, আমরা আদালতে যারা যারা আছি, আমরা সবাই জামায়াতের অর্থের জোগানদাতা।”

তার এ কথায় এজলাসে উপস্থিত জামায়তের প্রায় অর্ধশত আইনজীবী চিৎকার করে বলতে থাকেন- ‘আমাদের সবাইকে রিমান্ডে নেন।’

শিশির মনির বলেন, “প্রয়োজনে আসামিদের জেলগেইটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হাকে আইনজীবীদের সামনে রেখে। জামায়াত কোনো বোমাবাজ নয়, তারা ছুরি, এমনকি আলপিনও বহন করেননি।”

আসামিপক্ষে আইনজীবী গোলাম রহমান ভূইয়া, কামাল উদ্দিনসহ আরো কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ডের বিরোধিতায় একই ধরনের বক্তব্য দিতে গেলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আবু আবদুল্লাহ বলেন, “একই কথার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। নতুন কিছু থাকলে বলেন।”

রাষ্ট্রপক্ষে আসা অপর আইনজীবী এ এফ এম রিজাউর রহমান রুমেল এবং শহীদ উদ্দিনও তার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেন।

আসামিপক্ষে বলা হয়, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করতে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়, এ ক্ষেত্রে নেওয়া হয়নি।

জবাবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, অনুমতি নিয়েই এ মামলা করা হয়েছে।

আবু আবদুল্লাহ শুনানির এক পর্যায়ে বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে প্রাউড ফিল করেন আপনারা?”

তখন আবারো আসামিপক্ষ উত্তেজিত হয়ে হৈ চৈ শুরু করে।

পরে আসামিদের পক্ষে আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক আদালতের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, “ওরা ছোট মানুষ, না বুঝে হৈ চৈ করেছে।”

তিনি বলতে থাকেন, “এতদিন সরকারের ছিল পরীমনি ইস্যু , এখন জামাতকে ইস্যু করা হচ্ছে।”

৪০ মিনিট ধরে শুনানি শেষে বিচারক সবাইকে শান্ত হতে বলে জামিনের আবেদনটি নাকচ করে দেন। 

আদেশটি পড়ে শোনান সংশ্লিষ্ট আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কমকর্তা এস আই রনপ কুমার ভক্ত।

আদেশে বলা হয়, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে সতর্কতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হল।