‘অপপ্রচার, বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর’ অভিযোগ হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে

আওয়ামী লীগে পদ হারানো ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল মাধ্যমে ‘অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর’ অভিযোগ আনছে র‌্যাব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2021, 08:17 AM
Updated : 30 July 2021, 08:17 AM

বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার গুলশানে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে র‌্যাব আটক করে। পরে মিরপুরে হেলেনার মালিকানাধীন জয়যাত্রা আইপিটিভির কার্যালয় এবং জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন ভবনেও অভিযান চালায় র‌্যাব।

রাতের অভিযান শেষে হেলেনাকে আটকের কারণ জানতে চাইলে তার বাসায় ‘মদ, হরিণের চামড়া, ক্যাসিনো বোর্ড, ওয়াকিটকিসহ বেশ কিছু অবৈধ সরঞ্জাম’ পাওয়ার কথা বলেছিলেন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ।

আর মিরপুরে জয়যাত্রা আইপি টিভি ও জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন ভবনেও অভিযানের পর র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির শাহ বলেছিলেন, জয়যাত্রা টিভির ‘কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না’।

শুক্রবার দুপুরে র‌্যাবের এক বার্তায় বলা হয়, “ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গের সম্মানহানি করার অপচেষ্টার অভিযোগে” হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সম্প্রতি আলোচনায় উঠে আসা হেলেনা জাহাঙ্গীরের ঢাকার গুলশানের বাড়িতে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে অভিযান শুরু করে র‌্যাব।

পরে মধ্যরাতে তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”

রাত সোয়া ১২টার দিকে পাঁচ তলা ওই বাড়িতে নিজের ফ্ল্যাট থেকে হেলেনা জাহাঙ্গীর যখন র‌্যাব সদস্যদের সঙ্গে বেরিয়ে আসেন, তার মুখে ছিল মাস্ক। পরনে ছিল বেগুনি রঙের জামা ও হলুদ ওড়না।

তিনি উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে দুবার হাত নাড়েন। এসময় তিনি কিছু বলতে চাইলেও সেই সুযোগ পাননি। র‌্যাব সদস্যরা তাকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।

এসময় একটি ট্রেতে করে কিছু ছুরি এবং লাল একটি লাগেজও র‌্যাব সদস্যদের নিয়ে যেতে দেখা যায়।

এরপর র‌্যাবের নির্বাহী হাকিম পলাশ কুমার বসু ওই বাড়ির নিচতলায় সাংবাদিকদের বলেন, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়েছিলেন তারা।

অভিযানে ওই বাসা থেকে বিদেশি মদ, ওয়াকিটকি সেট, বিদেশি মুদ্রা, জুয়া খেলার সরঞ্জাম ও হরিণের চামড়া জব্দ করার কথা বলেন তিনি।

পলাশ বসু বলেন, “জব্দকৃত আলামত ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে আরও বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি।”

পরে গভীর রাতে মিরপুর-১১ নম্বরের এ ব্লকের ৩ নম্বর রোডে জয়যাত্রা টিভি কার্যালয়ে অভিযান চালানোর কথা জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক ইমরান হোসাইন।

অভিযান শেষে র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট নাদির শাহ সাংবাদিকদের বলেন, “রাতে গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, জয়যাত্রা নামে তার একটি আইপি টিভি রয়েছে।

“তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মিরপুরে জয়যাত্রা টিভি কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। সব ধরনের সেটআপ থাকলেও চ্যানেলটির কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না।”

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর পরিচালক হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা গ্রুপের কর্ণধার। জয়যাত্রা টেলিভিশনের চেয়ারপারসন হেলেনা নিজেকে আইপি টিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবেও পরিচয় দেন।

হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটিতে সদস্য ছিলেন। কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগেরও উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন তিনি।

‘বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ নামের একটি ‘ভূইফোঁড়’ সংগঠনে হেলেনা জাহাঙ্গীরের সভাপতি হওয়ার খবর চাউর হলে সম্প্রতি তাকে দুই কমিটি থেকেই বাদ দেয় আওয়ামী লীগ।

হেলেনা এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কুমিল্লায় আব্দুল মতিন খসরুর আসনে উপনির্বাচনেও প্রার্থী হতেও চেয়েছিলেন তিনি। তবে কোনোবারই তিনি দলের মনোনয়ন পাননি।