করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতির কারণে অমর একুশে বইমেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আলোচনার মধ্যে ছুটির দিন বিকেলে বইপ্রেমীদের ঢল নেমেছিল মেলা প্রাঙ্গণে।
Published : 02 Apr 2021, 09:15 PM
শুক্রবার সকাল ১১টায় মেলার দ্বার খুললেও ক্রেতা-দর্শনার্থীর অভাবে শুরুর দিকে অনেকটা খরায় ভুগে বইমেলার স্টল-প্যাভিলিয়নগুলো।
বিকেল ৩টার পর থেকে ১৫ লাখ বর্গফুটের বিশাল মেলাপ্রান্তরে বয়ে যায় প্রাণের প্রবাহ; জনসমাগম বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকে বইয়ের বিকিকিনি।
করোনাভাইরাসের আতঙ্কে বইমেলার সময় কমিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বন্ধ করে দেওয়া হলেও চৈত্রের দাবদাহের মধ্যে দুপুরে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আনাগোনা ছিল কম।
বিকেলে মেলা জমে উঠলেও অল্প সময়ে মেলায় পছন্দের বই ঘুরে ঘুরে দেখতে পারছেন না বলে দাবি বইপ্রেমীদের।
দেশে দ্রুত বাড়তে থাকা করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে অবিলম্বে বইমেলা, সামাজিক অনুষ্ঠান, বিনোদন কেন্দ্রসহ যে কোনো ধরনের মেলা বন্ধ করার সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
সেই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা একাডেমি এখনও কোনো সিদ্ধান্ত না নিলেও মেলা কখন বন্ধ হয়ে যায়, তা নিয়ে শঙ্কায় ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই।
মেলার সময় নির্ধারিত সময় কম হওয়ায় ক্রেতা-দর্শনার্থীরা সাধারণ স্টলগুলো তেমন ঘুরে দেখার সুযোগ পাচ্ছে না বলে দাবি স্টল মালিক ও বিক্রয় কর্মীদের।
‘কথা প্রকাশ’ প্যাভিলিয়নের ব্যবস্থাপক এসএম ইউনুস বলেন, “আসলে সারাদিন ক্রেতা-দর্শনার্থী তেমন দেখা মেলে না। বিকেল বেলা সবাই একসাথে এসে ভিড় করে। গত ১৬ দিনে আজকে সবচেয়ে বেশি ক্রেতা-দর্শনার্থী দেখা গেছে। মেলা কখন বন্ধ হয়ে যায়, এ একটা অনিশ্চয়তা কাজ করছে সবার মাঝে।”
গত বছরের তুলনায় এবছর মেলায় কেমন বেচাকেনা হচ্ছে জানতে চাইলে অন্বেষা প্রকাশনের পরিচালক ফাতেমা বুলবুল বলেন, “আসলে গত বছরের সাথে এবছর তুলনা করা যাবে না। মহামারীর সময়ে মেলা হচ্ছে, আমাদের ঐতিহ্য ধরে রাখা যাচ্ছে, সেটাই বড় বিষয়। তারপরও বিকেলে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভালো সাড়া পাচ্ছি।”
ছুটির দিনে নেই শিশুদের আনাগোনা
করোনাভাইরাস আতঙ্কে এবার মেলায় ‘শিশু প্রহর’ না থাকায় দিনভর শিশুদের তেমন উপস্থিতি চোখে পড়েনি। বিকেলে মেলার শিশু চত্বরে বাবা-মায়ের সঙ্গে শিশু-কিশোরদের কিছুটা দেখা মেলে।
সাত বছরের শিশু ইউসুফ আব্দুল্লাহ আয়ানকে নিয়ে রাজধানীর বিজয়নগর থেকে থেকে বিকেলে বইমেলায় এসেছেন নাহিদা আলম। মেলার শিশু চত্বরের স্টলগুলোতে ঘুরে ঘুরে গল্পের বই দেখছে আয়ান।
সে বলল, “মেলায় অনেক সুন্দর সুন্দর গল্পের বই ঘুরে দেখেছি। ছবি থাকলে গল্প পড়ে আমার অনেক ভালো লাগে।”
নাহিদা আলম বলেন, “আসলে এই করোনার মধ্যে শিশুদের নিয়ে বের হওয়ার অনেক রিস্ক। তারপরও ছেলের বায়না রাখতে গিয়ে আসতে হলো। তবে শিশু চত্বর ছাড়া ঘুরে দেখার মতো আর কোথাও ঘুরে দেখার পরিবেশ নাই, সব জায়গায় লোকে লোকারণ্য।”
এদিকে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর খুব বেশি বেচা-কেনা হচ্ছে না বলে দাবি শিশু চত্বরের স্টল মালিক ও বিক্রয় কর্মীদের।
শিশু গ্রন্থকুটির প্রকাশনী বিক্রয় কর্মীয় তপতী পোদ্দার বলেন, “যেহেতু পরিস্থিতি অনুকূলে নেই, তাই অভিভাবকরা শিশুদের বইমেলায় নিয়ে আসতে সাহস পাচ্ছেন না। ছুটির দিনে আমাদের বেচাকেনা অনেক ভালো হয়। কিন্তু আজকে সকাল থেকেই শিশু চত্বর ফাঁকা।”
করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় বাংলা একাডেমির মূল প্রাঙ্গণে আলোচনা মঞ্চের অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
শুক্রবার অমর একুশে বইমেলার ১৬তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৯৯টি।
শনিবারের সময়সূচি
আগামীকাল শনিবার ১৭তম দিনে অমর একুশে বইমেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত।