মহামারীর কারণে অমর একুশে গ্রন্থমেলা পিছিয়ে যাওয়ায় ভার্চুয়াল বইমেলার আয়োজন করে সেই শূন্যতা ‘কিছুটা হলেও’ পূরণের চেষ্টা করেছে শ্রাবণ প্রকাশনী; তবে তাতে মন ভরবে কি না, সংশয় আছে বইপ্রেমিদের।
Published : 01 Feb 2021, 06:17 PM
তারা বলছেন, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মুখরিত হত নতুন বইয়ের ঘ্রাণে; সেই আমেজ কি আর ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে মেলে!
ভাষার মাসে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্টলে স্টলে ঘুরে বইপ্রেমীরা বই পছন্দ করতেন, প্রকাশকরাও বছরের এ সময়টায় সবচেয়ে বেশি নতুন বই প্রকাশ করতেন। করোনাভাইরাস তাদের সেই মেলবন্ধন থেকে বঞ্চিত করছে।
বাংলা একাডেমি একুশে গ্রন্থমেলা পিছিয়ে ১৮ মার্চ থেকে শুরুর পরিকল্পনা করেছে। আর ফেব্রুয়ারি যাতে একেবারে বইমেলাহীন না যায়, সেই লক্ষ্যে মাসজুড়ে ভার্চুয়াল বইমেলার আয়োজন করছে শ্রাবণ প্রকাশনী।
তাদের ‘বইঅনলাইন বিডি’ নামের এই ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মেলা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে। ‘এই একুশে বই যাবে পাঠকের ঘরে ঘরে’ স্লোগান নিয়ে এ মেলায় অংশ নিচ্ছে সাহিত্য প্রকাশ,পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স, আগামী প্রকাশনী, প্রতীক প্রকাশনা, মাওলা ব্রাদার্স, ইউপিএল লিমিটেড, বাংলা একাডেমি, অন্যধারা, অবসর প্রকাশনা, দিব্যপ্রকাশসহ ২২টি প্রকাশনা সংস্থা।
সোমবার সকালে পিরোজপুর থেকে বইঅনলাইন বিডিতে বইয়ের অর্ডার করতে চেয়েছিলেন সিদ্ধার্থ সরকার। কারিগরি জটিলতার কারণে তিনি দুপুর পর্যন্ত তা করতে পারেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রাবণ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রবিন আহসান বলেন, দুপুরের পর থেকে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন তারা। বেলা ২টার দিক থেকে তারা অনলাইনে বই বিক্রি করতে পারছেন।
সিদ্ধার্থ সরকার পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মূল বইমেলার বিকল্প এটা কোনোভাবেই হবে না। বইমেলায় ঘুরে ঘুরে যে বই কেনার সুযোগ, সেটার বিকল্প কি অনলাইন বইমেলা হতে পারে? কতজন প্রকাশকই বা যোগ দেন এখানে? সব বইয়ের ব্যাপারে তো তারা অনলাইনে বিজ্ঞাপনও দেবে না।”
বারিধারা বাসিন্দা খালিদ হোসাইন নিয়মিত অনলাইন থেকে বই কেনেন। তবে অনলাইন বইমেলায় তিনি তৃপ্ত নন।
“একুশে বইমেলায় লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের যে সংযোগ ঘটে, সেটাই তো বইমেলার স্বার্থকতা। বইমেলায় অল্পবিস্তর হলেও লেখকদের দেখা পাই আমরা। হয়ত কথা বলার সুযোগ পাই। সাহিত্যিকরা পাঠকের রুচিবোধটা একদম সচক্ষে দেখেন। অনলাইনে কোন বই, কোন জাতের বই বিক্রি হল, তা কি আমরা দেখতে পাব? অনলাইন বইমেলা কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক।”
রবিন আহসানের দাবি, অনন্ত ১০০টি প্রকাশনা সংস্থা তাদের এই ভার্চুয়াল বইমেলায় যোগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মুজিববর্ষে অনলাইন বইমেলায় বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের ইতিহাসভিত্তিক বইগুলোই বেশি থাকবে।
শ্রাবণ প্রকাশনী থেকে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক সব বইয়ের দামে ৩৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে জানান এই প্রকাশক।
তিনি বলেন, “আমরা অন্য প্রকাশনীর সঙ্গেও কথা বলেছি। তারাও বলেছেন, বইঅনলাইন বিডির প্ল্যাটফর্মে বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বইগুলোতে বিশেষ ছাড় থাকবে।”
বইঅনলাইন বিডির প্ল্যাটফর্মে অর্ডার করলেই ঘরে পৌঁছে যাবে পাঠকের কাঙিক্ষত বই। তবে দেশের বাইরে থেকে কারও এই বইমেলা থেকে বই কেনার সুযোগ নেই বলে জানান রবিন।
তিনি বলেন, “দেশের বাইরে বই পাঠাতে যে খরচ হবে, তাতে হয়ত সব প্রকাশকরা আগ্রহী হবেন না।”
বইঅনলাইন বিডির ফেইসবুক পেইজে প্রতিদিন রাত ৮টায় নতুন বইয়ের খবর জানাবেন আয়োজকরা। প্রতিদিন রাত ১১টায় কবি, সাহিত্যিকদের ভার্চুয়াল আড্ডার আয়োজনও থাকবে।
রবিন বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে যারা সরাসরি বইমেলায় আসতে পারবেন না, তারা ঘরে বসেই পছন্দের বইটি পেয়ে যাবেন। অনলাইন বইমেলায় আশা করি সাড়া পাব।”
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির বর্তমান সভাপতি ও সময় প্রকাশনীর স্বত্তাধিকারী ফরিদ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে কেউ (প্রকাশক) তার ব্যক্তিগত প্রমোশনের জন্য অনলাইনে যে কোনো সময় বইমেলার আয়োজন করতে পারেন। ফেব্রুয়ারি মাস উপলক্ষে আরও অনেকেই এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বইমেলা আয়োজন করতে চান।
“করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে অনলাইন বই বিক্রির ব্যাপারটি বেশ জমে উঠেছে। তবে সেটা কিন্তু আমাদের মূল বইমেলার বিকল্প নয়।”
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাবেক দুই সভাপতি আগামী প্রকাশনীর ওসমান গণি ও অন্যপ্রকাশের মাজহারুল ইসলামও একই কথা বললেন।
ওসমান গণি বলেন, “অনলাইনে বই মেলা আয়োজন দোষের কিছু না। অনলাইনে যে কেউ বইমেলা আয়োজন করতে পারে। দেখার বিষয় হল, এখানে কতটা বই বিক্রি হল, কারা অংশ নিল। এই বইমেলায় সব বই তো আসে না। তবে একুশের আবহ অনলাইনে, এটা মানতে পারলাম না। মূল বইমেলার আমেজ কোনোভাবেই অনলাইনে পাওয়া যাবে না।”
মাজহারুল ইসলাম বলেন, “অনলাইন জনপ্রিয় হচ্ছে বটে। কিন্তু মূল বইমেলার পরিপূরক অনলাইন বইমেলা কখনও হতে পারে না। বই তো আর চাল-ডাল-আলুর মতো বিষয় না। এটা ঘুরে ঘুরে, দেখে বুঝে কেনার ব্যাপার।”
মহামারীর মধ্যে এই অনলাইন বইমেলার আয়োজনকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এখন তো অনলাইন জনপ্রিয় হচ্ছে। দেখা যাক।”