আদালত অবমাননা: নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা বিইআরসি চেয়ারম্যানের

নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে আদালত অবমাননার রুল থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2020, 12:20 PM
Updated : 15 Dec 2020, 06:04 PM

তবে আদালত তার অব্যাহতির বিষয়ে কোনো আদেশ দেয়নি। 

বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাই কোর্ট বেঞ্চ বিইআরসি চেয়ারম্যানের আবেদনটি নথিভুক্ত করে রুল শুনানির জন্য আগামী ১১ জানুয়ারি তারিখ রেখেছে।

বিইআরসি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু। এছাড়াও ছিলেন বিইআরসির প্যানেল আইনজীবী এসএম মাসুম ও আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন। 

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। আর ভোক্তা অধিকার সংস্থা- ক্যাব’র পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জ্যেতির্ময় বড়ুয়া।

বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করে আদালতে প্রতিবেদন না দেওয়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে গত ২৯ নভেম্বর আদালত অবমাননার রুল জারি করে হাই কোর্ট।

আদালতের আদেশ প্রতিপালন না করায় কেন তার বিরুদ্ধে অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে মঙ্গলবার আদেশের জন্য রেখেছিল।

আদালতের সে নির্দেশ অনুযায়ী আইনজীবীকে দিয়ে রুলের জবাব দেন বিইআরসির চেয়ারম্যান। 

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে বিইআরসির চেয়ারম্যানের পক্ষে তার আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে রুল থেকে অব্যাহতি চেয়েছিলেন। বিইআরসির চেয়ারম্যানের আবেদনটি নথিভুক্ত করে রেখেছেন আদালত। জানুয়ারিতে রুল শুনানির জন্য রাখা হয়েছে।”

বিইআরসির আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন বলেন, তিনটা রেগুলেশন (প্রবিধানমালা) করা হয়েছিল দাম নির্ধারণের জন্য। কিন্তু সেগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এখনও অনুমোদন পায়নি।

তিনি বলেন, “এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণের জন্য মতামত চেয়ে গত ২ ডিসেম্বর সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়েছিল। ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের জানাতে বলা হয়েছিল। এর মধ্যে এলপিজি অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন চিঠি লিখে জানিয়েছে এত অল্প সময়ের মধ্যে তাদের পক্ষে মতামত দেওয়া সম্ভব না। তারা ৩০ দিন সময় চেয়েছে।

“এছাড়া গত রোববার বিইআরসি একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে দিয়েছে। এই কমিটি কবে, কিভাবে, কখন গণশুনানি করা যায় তা নির্ধারণ করবে। এ সব কিছু হলফনামা করে আদালতে দাখিল করা হয়েছে। আদালত বলেছে, যেহেতু সবকিছু রেডি তাই রুল শুনানি করবে বলে জানিয়েছে। আগামী ১১ জানুয়ারি তারিখ রাখা হয়েছে।”

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-২০০৩ এর ২২(খ) এবং ৩৪ ধারা অনুযায়ী এলপিজি, গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং তেলসহ সকল প্রকার জ্বালানির দাম নির্ধারণের আইনগত দায়িত্ব এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের। বিশ্ববাজার ও দেশীয় চাহিদার ভিত্তিতে গণশুনানির মাধ্যমে বিইআরসি মূল্য পুনঃনির্ধারণ করে।

সর্বশেষ ২০০৯ সালে সাড়ে ১২ কেজি ওজনের এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৭০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বিইআরসি। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারের এই গ্যাসের দাম কয়েক দফা কমলেও দেশে গণশুনানি করে দাম পুনঃনির্ধারণ করেনি বিইআরিসি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সিলিন্ডারের দাম পুনঃনির্ধারণের নির্দেশনা চেয়ে ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই বিইআরসিতে আবেদন করে ক্যাব। ওই আবেদনটি নিষ্পত্তি করেনি বিইআরসি।

পরে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের জ্বালানির দাম কমলেও দেশে এলপিজির দাম পুনঃনির্ধারণ না করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে রিট করে ক্যাব। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১৩ নভেম্বর রুল জারি করে।

ফাইল ছবি

এলপিজি (সিলিন্ডার) গ্যাসের দাম পুনঃনির্ধারণ না করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। তখন আদালত চার সপ্তাহের মধ্যে বিইআরসি চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলে। 

এরপর গত প্রায় চার বছর বিভিন্ন সময় আদালত আদেশ দিলেও বিইআরসি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণের ব্যপারে কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। 

সর্বশেষ ক্যাবের আবেদনে গত ২৫ অগাস্ট হাই কোর্ট বিইআরসির চেয়ারম্যানকে আদেশ দিয়ে বলে ৩০ দিনের মধ্যে গণশুনানি করে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করতে। এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয় বিইআরসি চেয়ারম্যানকে। কিন্তু বিইআরসি দাম নির্ধারণ না করেই গত ১৭ নভেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দেয়।

সে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-২০০৩ এর ৩৪ ধারা অনুযায়ী পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের খুচরা ট্যারিফ প্রবিধিমালা- ২০১২,পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ মজুতকরণ, বিপনন ও বিতরণ ট্যারিফ প্রবিধিমালা-২০১২ এবং পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ পরিবহন ট্যারিফ প্রবিধিমালা-২০১২ নামে তিনিটি প্রবিধানমালার খসড়া অনুমোদনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনে (বিপিসি) পাঠানো হয়েছে। ২০১৩ সালের ১৪ মে খসড়াগুলো পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কমিশন আজ পর্যন্ত সে অনুমোদন পায়নি।

এছাড়া দাম নির্ধারণে জন্য কমিশন ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। গত ১৫ অক্টোবর এই কমিটি এলপিজি অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন, ক্যাব, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে চারটি পদ্ধতি নির্ধারণ করেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কমিশন কোনোভাবেই দাম নির্ধারণ করতে পারে না।

এরপর আদালত ক্যাবের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে বিইআরসির চেয়াম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে।

ক্যাবের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার ভাষ্য, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-২০০৩ এর ২২(খ) এবং ৩৪ ধারা অনুযায়ী কমিশনই মূল্য নির্ধারণ করতে পারে। সে ক্ষমতা থাকার পরও কমিশন এখনও সে কাজ করেনি। আদালত আদেশ প্রতিপালন না করে বিইআরসি আদালত অবমাননা করেছে।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত অর্থাৎ আপিল বিভাগের একজন বিচারকের সমান পদমর্যাদা দেওয়া হয় বিইআরসির চেয়ারম্যানকে।