এলপিজি সিলিন্ডার: বিইআরসি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল

বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করে আদালতে প্রতিবেদন না দেওয়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2020, 02:28 PM
Updated : 29 Nov 2020, 02:38 PM

বিচারপতি জনাব মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এ রুল জারি করে।

আদালতের আদেশ প্রতিপালন না করায় কেন তার বিরুদ্ধে অদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না তা দুই সপ্তাহের মধ্যে জানতে চাওয়া হয়েছে।

আদালতে ভোক্তা অধিকার সংস্থার (ক্যাব) রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জ্যেতির্ময় বড়ুয়া, বিইআরসির পক্ষে ছিলেন সৈয়দ মাহসিব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী।

জ্যেতির্ময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, ১৫ ডিসেম্বর পরবর্তী আদেশের জন্য বিষয়টি আদালতের তালিকায় থাকবে।

বিইআরসির আইনজীবী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে আমরা বাস্তবায়ন প্রতিবেদন দিয়েছি আদালতে। কিন্তু সেটা আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। ফলে আদালত একটি রুল ইস্যু করেছেন।”

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-২০০৩ এর ২২(খ) এবং ৩৪ ধারা অনুযায়ী এলপিজি, গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং তেলসহ সকল প্রকার জ্বালানির দাম নির্ধারণের আইনগত দায়িত্ব এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের।

বিশ্ব বাজার ও দেশীয় চাহিদার ভিত্তিতে গণ শুনানির মাধ্যমে বিইআরসি মূল্য পুনঃনির্ধারণ করে থাকে।

সর্বশেষ ২০০৯ সালে সাড়ে ১২ কেজি ওজনের এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৭০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বিইআরসি। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারের এই গ্যাসের দাম কয়েক দফা কমলেও দেশে গণশুনানি করে দাম পুনঃনির্ধারণ করেনি বিইআরিসি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সিলিন্ডারের দাম পুনঃনির্ধারণের নির্দেশনা চেয়ে ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই বিইআরসিতে আবেদন করে ক্যাব। ওই আবেদনটি নিষ্পত্তি না করে রহস্যজনকভাবে ঝুলিয়ে রাখে বিইআরসি।

পরে আন্তর্জাতিক বাজারে সকল প্রকার জ্বালানির দাম কমলেও দেশে এলপিজির দাম পুনঃনির্ধারণ না করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে রিট করে ভোক্তা অধিকার সংস্থা (ক্যাব)।

ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১৩ নভেম্বর রুল জারি করে।

এলপিজি (সিলিন্ডার) গ্যাসের দাম পুনঃনির্ধারণ না করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

তখন আদালত চার সপ্তাহের মধ্যে বিইআরসি চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলে। 

এরপর গত প্রায় চার বছর বিভিন্ন সময় আদালত আদেশ দিলেও বিইআরসি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণের ব্যপারে কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। 

সর্বশেষ ক্যাবের আবেদনে গত ২৫ আগস্ট হাই কোর্ট বিইআরসির চেয়ারম্যানকে ৩০ দিনের মধ্যে গণশুনানি করে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে আদেশ দেয়।

১৭ নভেম্বর বিইআরসি দাম নির্ধারণ না করেই আদালতে প্রতিবেদন দেয়।

সে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-২০০৩ এর ৩৪ ধারা অনুযায়ী পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের খুচরা ট্যারিফ প্রবিধিমালা- ২০১২,পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ মজুতকরণ, বিপনন ও বিতরণ ট্যারিফ প্রবিধিমালা-২০১২ এবং পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ পরিবহন ট্যারিফ প্রবিধিমালা-২০১২ নামে তিনিটি প্রবিধানমালার খসড়া অনুমোদনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনে (বিপিসি) পাঠানো হয়েছে।

২০১৩ সালের ১৪ মে খসড়াগুলো পাঠানো হলেও কমিশন এখনো অনুমোদন দেয়নি। এছাড়া দাম নির্ধারণে জন্য কমিশন ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।

গত ১৫ অক্টোবর এই কমিটি এলপিজি অপারেটর এ্যাসোসিয়েশন, ক্যাব, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে মত বিনিময় করে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে চারটি পদ্ধতি নির্ধারণ করেছে।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কমিশন কোনোভাবেই দাম নির্ধারণ করতে পারে না।

ক্যাবের আইনজীবী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও এলপিজি (সিলিন্ডার) গ্যাসের দাম আমাদের দেশে কমছে না বরং বেড়েই চলেছে।

অথচ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-২০০৩ এর ২২(খ) এবং ৩৪ ধারা অনুযায়ী বিইঅকমিশনই মূল্য নির্ধারণ করতে পারে। সে ক্ষমতা থাকার পরও কমিশন এখন পর‌্যন্ত সে কাজ করেনি। আদালত আদেশ প্রতিপালন না করে বিইআরসি আদালত অবমাননা করেছেন।

এরপরই আদালত বিইআরসির চেয়ার্যোনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত অর্থাৎ আপিল বিভাগের একজন বিচারকের সমান পদমর্যাদা দেওয়া হয় বিইআরসির চেয়ারম্যানকে।