‘আমি পাগল মজনু, আইজকা ছাইড়া দ্যান’

রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ মামলার রয়ের দিন একমাত্র আসামি মজনুকে আদালতে দেখা গেছে বিচিত্র মেজাজে।

প্রকাশ বিশ্বাসপ্রকাশ বিশ্বাসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2020, 08:57 AM
Updated : 19 Nov 2020, 04:34 PM

বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে হাজির করার পর তিনি কখনও কান্নাকাটি করে ছেড়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন, কখনও আবার উদ্ধত ভঙ্গিতে চিৎকার করে হুমকি দিয়েছেন, অকথ্য গালাগাল করে মারতে উদ্যত হয়েছেন পুলিশ সদস্যদের।

ঢাকার সপ্তম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার বৃহস্পতিবার দুপুরে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

ধর্ষণের দায়ে ৩০ বছর বয়সী মজনুকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয় রায়ে।

মজনু ব্যাপক চিৎকার-চেঁচামেচির কারণে সাংবাদিক ও উৎসুক আইনজীবীদের বের করে দিয়ে রুদ্ধদ্বার আদালত কক্ষে রায় ঘোষণা করেন বিচারক।

এ বছরের ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর ঢাকার কুর্মিটোলায় নির্জন সড়কের পাশে ধর্ষণের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থী। পরদিন তার বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন।

তিন দিন বাদে মজনুকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব জানায়, নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে ১০ বছর আগে ঢাকায় আসা এই ব্যক্তিই ধর্ষণকারী। সে মাদকাসক্ত এবং এর আগেও অনেককে ধর্ষণ করেছে।

গত ২৬ আগস্ট অভিযোগ গঠনের পর ১৩ কার্যদিবসে বিচার শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে। রায়ের জন্য বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে কাশিমপুর কারাগার থেকে মজনুকে আদালতে নিয়ে আসা হয়।

এ সময় মজনু তাকে ‘ছেড়ে দেওয়ার’ আর্জি জানাতে থাকেন। তাকে বলতে শোনা যায়, “ভাই আমাকে ছেড়ে দেন। আমি এতিম, অসহায়। আমারে মারলে আল্লাহ অনেক শাস্তি দিবে। আমাকে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি নির্দোষ।”

বেলা আড়াইটার দিকে মজনুকে এজলাসে নেওয়া হলে কড়া পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যে কাঠগড়ায় থেকেই তিনি হইচই শুরু করেন।

চিৎকার করে তিনি বলতে থাকেন, “আমি বাড়ি যামু গা, আমি আর থাকব না। আমি রিকশা চালাই, ভ্যান চালাই। আমি দুর্বল মানুষ। আমারে বিনা দোষে ধরে এনেছে। আল্লাহ বিচার করব রে। আমার নাম মজনু। আমি পাগল মজনু। আইজকা ছাইড়া দ্যান। আমারে এক বছর বিনাদোষে আটকে রেখেছে।”

এক পর্যায়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হাজত পুলিশের এক সদস্যের ঘাড় চেপে ধরেন আসামি মজনু। এরপর কাঁদতে কাঁদতে কোর্ট হাজতের ওসির কাছে অভিযোগ জানাতে থাকেন এবং পুলিশ সদস্যদের গালাগাল শুরু করেন।

“আমার চোখের পানি শুকায়ে গেছে। আমি ধর্ষণকারী না। আমারে তাড়াতাড়ি ছাইড়া দেন। না হলে অবস্থা খারাপ হবে। হাতের হ্যান্ডকাফ একবার খুলে দে। কত পুলিশ আছে দেখে নেব।”'

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আফরোজা ফারহানা আহম্মেদ অরেঞ্জ তখন বলেন, “ক্যামেরা দেখে আসামি সিন ক্রিয়েট করছে।”

মজনু বলতে থাকেন, কাশিমপুর কারাগারে অনেক মশা। আদালতে আনার জন্য তাকে কিছু খেতেও দেওয়া হয়নি।

“আমারে অনেক অত্যাচার করেছে। আমার পক্ষে কেউ নাই। আমারে ছাইড়া দেন। আমি ব্রিজ থেকে লাফ দেব।”

মজনুর চিৎকার চেঁচামেচিতে বাধ্য হয়ে এক পর্যায়ে বিচারক সাংবাদিক ও উৎসুক আইনজীবীদের বাইরে বারান্দায় যেতে বলেন।

আইন সাংবাদিকদের মধ্যে কেবল জ্যেষ্ঠ একজনকে এজলাসে থাকার অনুমতি দেওয়া হলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আদালত প্রতিবেদক রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত থাকার সুযোগ পান।

রায়ের পর মজনুকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে পুলিশ বেষ্টনীর কোর্ট হাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।

আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইডের রবিউল ইসলাম রবিকে এ মামলায় মজনুর পক্ষে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

রায়ের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সে নেচারালি এরকম। আজ অনেক লোক যখন প্রশ্ন করেছে, সে ধর্ষণ করেছে কি না সেই সুযোগ সে উল্টো পাল্টা আচরণ করেছে অস্বাভাবিক আচরণ করেছে।”