ব্লগার ওয়াশিকুর হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ

ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে আসামিপক্ষে শুনানি শুরু হয়েছে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Sept 2020, 04:00 PM
Updated : 21 Sept 2020, 04:00 PM

সোমবার রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্কের শুনানিতে মামলা প্রমাণে সক্ষম হয়েছে দাবি করে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেছে। রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, লেখার জবাব লেখা দিয়েই করা উচিৎ। কোনো বক্তব্যের সমালোচনার উত্তর হত্যা হতে পারে না। ইসলাম কেন, কোনো ধর্মই এটাকে সমর্থন করে না।

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর অবশিষ্ট যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য দিন রেখেছেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রবিউল ইসলাম।

সোমবার রাষ্ট্রপক্ষে সালাউদ্দিন হাওলাদার আর আসামিপক্ষে আইনজীবী আব্দুর রশীদ মোল্লা ও নজরুল ইসলাম শুনানি করেন।

এর আগের দিন শুনানিতে এই হত্যা মামলার তিন আসামি আদালতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। এরা হলেন- জিকরুল্লাহ ওরফে হাসান, আরিফুল ইসলাম ওরফে মুশফিক ওরফে এরফান এবং সাইফুল ইসলাম ওরফে মানসুর।

গত ২৫ অগাস্ট এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। মামলায় ৪০ সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জন সাক্ষ্য দেন।

পলাতক দুই আসামি জুনেদ ওরফে জুনায়েদ আহমেদ ওরফে তাহের এবং আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আব্দুল্লাহর পক্ষে মামলা লড়তে আদালতের আদেশে রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি পলাতকদের পক্ষে মামলা লড়ছেন।

নিহত ওয়াশিকুরের ভগ্নিপতি মো. মনির হোসেন মাসুদ মামলার বাদী। দীঘদিন তাকে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পর জানা যায়, তিনি নোয়াখালীতে তার গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করেন না। তিনি ঘটনার বেশ কিছু দিন পর জীবিকার উদ্দেশে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাকে দেশে এনে সাক্ষ্য দেওয়ার সাময়িক উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে তাতে কাজ হয়নি।

সে কারণে বাদীর সাক্ষ্য না নেওয়া গেলে নিয়ম অনুযায়ী মামলার রেকর্র্ডিং কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন বাদী মনির হোসেন মাসুদের এজাহারের স্বাক্ষর শনাক্ত করেন।

২০১৫ সালের ৩০ মার্চ ঢাকার তেজগাঁওয়ে নিজের বাসা থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীদের চাপাতির আঘাতে খুন হন ওয়াশিকুর, যিনি ফেইসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে লিখতেন। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বেগুনবাড়িতে এই হত্যাকাণ্ডের পরপরই জনতা ধাওয়া করে মাদ্রাসাছাত্র জিকরুল্লাহ ও আরিফুলকে ধরে ফেলে। আর সাইফুলকে হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন আগেই ধারালো অস্ত্রসহ যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। সাইফুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

ঘটনার পরদিন চারজনকে আসামি করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করেন নিহতের ভগ্নিপতি মনির হোসেন মাসুদ। পরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে। এরপর গত বছর ২ সেপ্টেম্বর গোয়েন্দা পুলিশ আনসারুল্লাহর পাঁচ সদস্যকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। সেখানে বলা হয়, এই পাঁচ আসামির মধ্যে পলাতক আব্দুল্লাহ হত্যার পুরো বিষয়টি পরিকল্পনা করেছিলেন এবং বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছিলেন।

এর আগে ২০০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে ফেইসবুকে লেখালেখিতে সক্রিয় রাজীব হায়দারকে খুন করা হয় একই কায়দায়। গত বছর ৩১ ডিসেম্বর ওই মামলার রায়ে দুইজনকে মৃত্যুদণ্ড, একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আরও পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় আদালত।

রাজীব হত্যার পর আরও অন্তত ছয়জন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক, প্রকাশক একই কায়দায় খুন হন। এর মধ্যে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে লেখক-ব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলার বিচার চলছে।

২৭ বছর বয়সী ওয়াশিকুর তেজগাঁও কলেজ থেকে লেখাপড়া শেষ করে মতিঝিলের ফারইস্ট এভিয়েশন নামের একটি ট্র্যাভেল এজেন্সিতে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছিলেন। তার বাবার নাম টিপু সুলতান, বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর গ্রামে। সামহোয়্যারইন ব্লগে ‘বোকা মানব’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থাকলেও তিনি মূলত লেখালেখি করতেন ফেইসবুকের কয়েকটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে।