বর্তমানে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে যে ১৭ জন ভর্তি আছেন, তাদের অবস্থাও সঙ্কটাপন্ন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ ১৬ জনের মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয় স্বজনদের কাছে। বাকিদের হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
শুক্রবার রাতের এই ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ অর্ধশতাধিক ব্যক্তির অধিকাংশকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছিল।
ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শংকর শনিবার সকালে সাংবাদিকদের জানান, সকাল ৯টা পর্যন্ত মোট ১১ জন মারা গেছেন।
শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকাল ১১টার দিকে মারা যান রাসেল নামে একজন।
ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুপুরে আরও দুজন মারা যায়। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ১৪ জন হল।
এরপর বিকালে আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর জানা যায় বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে, যাতে মৃতের সংখ্যা ১৭তে নিয়ে যায়।
রাত ৮টার দিকে মো. বাহারউদ্দীন (৫৫) নামে আরও একজনের মৃত্যুর খবর জানান ডা. পার্থ শংকর। এতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ জন হয়।
রাত ১০টার কিছুক্ষণ আগে মসজিদের ইমাম আব্দুস সোবহান (৬০) এবং মো. নিজাম ওরফে মিজান (৪০) নামে আরও দুইজনের মৃত্যুর খবর জানান ডা. পার্থ শংকর। তাদের নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২০ জনে দাঁড়ায়।
রাত ১১টায় নাদিম (৪৫) নামে আরও একজনের মৃত্যু তথ্য দেন ডা. পার্থ শংকর পাল। তাকে নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২১ জনে।
নিহতদের মধ্যে জোবায়ের (১৮) ও সাব্বির (২১) দুই ভাই। তাদের বাসা নারায়ণগঞ্জের তল্লায়। সাব্বির বিএ পাস করেছেন। জোবায়ের তোলারাম ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।
রাতে মারা যাওয়া মসজিমের ইমাম সোবহানের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরের পুটিয়াজুড়ি গ্রামে, তার ছেলে আব্দুল মালেকও এই ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
নিহত অন্যরা হলেন- মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার হাটবুকদিয়া গ্রামের কুদ্দুস ব্যাপারী (৭২), চাঁদপুর সদর উপজেলার করিম মিজির ছেলে মোস্তফা কামাল (৩৪), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার জুলহাস ফরাজির ছেলে জুয়েল (৭), পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার আব্দুল খালেক হাওলাদারের ছেলে গার্মেন্টস কর্মী মো. রাশেদ (৩০), নারায়ণগঞ্জের তল্লা এলাকার হুমায়ুন কবির (৭২), পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার কাউখালি গ্রামের মো. বেলায়েতের ছেলে জামাল আবেদিন (৪০), গার্মেন্টস কর্মী ইব্রাহিম বিশ্বাস (৪৩), নারায়ণগঞ্জ নিউ খানপুর ব্যাংক কলোনির কলেজ শিক্ষার্থী মো. রিফাত (১৮), চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার শেখদী গ্রামের মৃত মহসিনের ছেলে মাইনুউদ্দিন (১২), ফতুল্লার আনোয়ার হোসেনের ছেলে জয়নাল (৩৮), লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তালুক পলাশী গ্রামের গার্মেন্টসকর্মী নয়ন (২৭), নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার আব্দুল খালেকের ছেলে বাহার উদ্দিন (৫৫) এবং ফতুল্লার তল্লার কাঞ্চন হাওলাদার (৫০)।
শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম হোসেন খান রাত ৮টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে শনাক্তের পর বিনা ময়নাতদন্তে ১৬ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিদেরগুলো প্রক্রিয়াধীন।”
আহতদের বিষয়ে ডা. ইমাম বলেন, “দগ্ধদের সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। রোগীদের সবারই শরীরের কমপক্ষে ৩০ শতাংশের বেশি দগ্ধ।”
ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, “যারা ভর্তি আছেন, তারা কেউ শঙ্কামুক্ত নন। তাদের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ বলা যায়।”
আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার সকালে বার্ন ইউনিটে যান নারায়ণগঞ্জের ডিসি জসিম উদ্দিন। তিনি মৃতদের পরিবারকে ২০ হাজার আর আহতদের ১০ হাজার টাকা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
গ্যাস পাইপলাইনের লিকেজ থেকে গ্যাস জমে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস।
এই ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ফায়ার ব্রিগেডের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসিতে ব্যবহৃত ফ্রেয়ন গ্যাসের অস্তিত্ব আমরা মসজিদের ভেতরে বাতাসে পেয়েছি। এর পেছনে অন্য কোনো ঘটনা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজের সময় ছয়টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে একসঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।