আপিল বিভাগের রায়ে বলা হয়েছে, আইন প্রণয়ন করার সম্পূর্ণ এখতিয়ার জাতীয় সংসদের। আদালত সংসদকে আইন প্রণয়নের নির্দেশ দিতে পারে না।
“তবে কোনো আইন জনস্বার্থবিরোধী বা সংবিধান পরিপন্থি হলে তা বাতিল করতে পারে এবং কোনো আইন সংশোধনের জন্য আদালত কেবল মতামত দিতে পারে।”
সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়ের ফলে নদী দখল বা দূষণকারীর নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা আর থাকছে না বলে মনে করেন রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “হাই কোর্ট ১৭টি নির্দেশনা দিয়ে যে রায় দিয়েছিল, তার মধ্যে ৪ নম্বর নির্দেশনাটা বাতিল করা হয়েছে আপিল বিভাগের রায়ে। আর তিনটা নির্দেশনা সংশোধন করে পর্যবেক্ষণ বা মতামত হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।”
এ নির্দেশনাটি অপ্রয়োজনীয় উল্লেখ করে বাতিল করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।
এ বিষয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, “হাই কোর্ট ৪ নম্বর নির্দেশনায় যা বলেছিল, পরিবেশ আইনেই কিন্তু সেটা আছে। কাজেই বাতিল করার কারণে কিন্তু এই ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।”
হাই কোর্টের রায়ের ৭, ১৪ ও ১৫ নম্বর নির্দেশনা অনুযায়ী দখল বা দূষণকারীকে নির্বাচন ও ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে নির্দেশনা ছিল, সে দুটি নির্দেশনা সংশোধন করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।
হাই কোর্টের রায়ের ৭ নম্বর নির্দেশনায় নদী দখল এবং দূষণকে ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করে এর কঠিন সাজা এবং বড় আকারের জরিমানা নির্ধারণের নির্দেশ ছিল।
আর বাংলাদেশ ব্যাংক ও নির্বাচন কমমিশনকে নির্দেশ দিয়ে ১৪ ও ১৫ নম্বর নির্দেশনায় হাই কোর্ট বলেছিল, নদ-নদী দখল ও দূষণকারীদের যাতে ব্যাংক ঋণ ও নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।
মনজিল মোরসেদ বলেন, “যেহেতু এসব বিষয়ে নির্দিষ্ট আইন নাই, আপিল বিভাগের রায়ে ফলে নদ-নদী দখল ও দূষণকারীদের নির্বাচন বা ব্যাংক ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণার করার বাধ্যবাধকতা আর থাকছে না। দখল বা দূষণকারী নির্বাচন করতে পারবেন, ব্যাংক ঋণও নিতে পারবেন।
“আমার কথা হলো আপিল বিভাগ যেহেতু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, সরকার যেন আপিল বিভাগের এ মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তাহলে নদী দূষণ বা দখল রোধ করা যাবে।”
চার বছর আগে ঢাকার তুরাগ নদীর তীরে অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও মাটি ভরাট বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) পক্ষে জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করা হয়।
দীর্ঘ শুনানির পর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১৭ দফা নির্দেশনা দিয়ে হাই কোর্ট রায় দেয়।
সে রায়ে দেশের সকল নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়কে রক্ষার জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে ‘আইনগত অভিভাবক’ ঘোষণা করে হাই কোর্ট।
এছাড়া ৩০ দিনের মধ্যে তুরাগ নদের তীর থেকে নিশাত জুট মিলসসহ দখলকারীদের উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া হয় রায়ে।
হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়টি গত বছরের ১ জুলাই প্রকাশ হলে এর বিরুদ্ধে আপিল করে নিশাত জুট মিলস কর্তৃপক্ষ।
সে আপিল নিষ্পত্তি করে চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি রায় দেয় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
বেঞ্চের অন্য তিন বিচারক হলেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান। ৪০ পৃষ্ঠার রায়টি লিখেছেন বিচারপতি জিনাত আরা।
সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়টিই সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
তিনি বলেন, “আপিল বিভাগের রায়ে বলেছেন, কোনো নদী, জলাশয়ের জায়গা বিক্রি করা যাবে না বা লিজ দেওয়া যাবে না এবং বিক্রি বা লিজ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। জরিপের সময় প্রথমেই সিএস ম্যাপ (সার্ভে) অনুযায়ী ও পরে আরএস ম্যাপে জরিপ করতে হবে।”