বিএনপির অংশ না নেওয়ার ঘোষণা এবং জাতীয় পার্টির অনীহার মধ্যে মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় যশোর-৬ ও বগুড়া-১ আসনে ব্যালটের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কেমন হবে তা নিয়ে তেমন চিন্তিত নয় নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ বলছেন, ভোটার উপস্থিতির হারের কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় নিয়ম রক্ষার নির্বাচনে সেটা বড় কোনো বাধা নয়।
সাড়ে তিন মাস আগে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত তিন উপ-নির্বাচনের মধ্যে ইভিএমের ভোটে ঢাকা-১০ আসনে ভোট পড়েছিল ৫ শতাংশ।
আর ব্যালটের ভোটে গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ আসনে উপস্থিতি ছিল যথাক্রমে ৬০ ও ৬৯ শতাংশ।
যশোর-৬ আসনের উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন অফিসার হুমায়ুন কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্য বিধি মেনে ভোট নেওয়ার সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ভোটারদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, হাত পরিষ্কার এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা টানানো থাকবে।
“কেন্দ্রের প্রতিটি ভোটকক্ষে একজন ভোট দেওয়ার পরই আরেকজনকে ভেতরে যেতে দেওয়া হবে, কোনোভাবেই ঝুঁকি নেওয়া হবে না। একজন ভোট দেবে, তারপর আরেকজন বুথে যাবে।”
তিনি বলেন, মহামারীর কারণে অনলাইন ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে প্রিজাইডিং অফিসার ও গুরুত্বপূর্ণ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে। ১৩ জুলাই নির্বাচনী মালামাল ও সুরক্ষা সামগী বিতরণের সময় নির্বাচনী ম্যানুয়াল- নির্দেশিকা বিতরণ করা হবে।
মহামারীর মধ্যে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে আগাম মন্তব্য করতে রাজি নন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
হুমায়ুন কবির বলেন, “মহামারীর মধ্যে সবাই তো ঘরে থাকতে চায়। আমরা ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি; মাইকিং করছি। তাদের উপস্থিতি তো এবার বেশ চ্যালেঞ্জিং। এটা ভোটের নতুন একটি দিক, যা আগামীতে কাজে লাগবে।”
বগুড়া-১ উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা উপ-সচিব মাহবুব আলম শাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বন্যাকবলিত এলাকা হওয়ায় বগুড়ার অন্তত ১০টি ভোটকেন্দ্র স্থানান্তরিত করে উঁচু ও নিরাপদ জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে।
“এসব কেন্দ্রের তালিকা গেজেটও করা হয়েছে। কোনোভাবেই ভোটের আর অসুবিধা হবে না, ভোটাররাও নির্বিঘ্নে আসতে পারবেন।”
বিরোধীদের অনীহায় ভোট
ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রেখেও বিএনপি- জাপা উপ নির্বাচন নিয়ে অনীহা প্রকাশ করেছে। ব্যালট পেপারে থাকলেও মহামারীর মধ্যে ভোটে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দলটির মহাসচিব। ভোট পেছানোর অনুরোধ জানিয়েছে জাতীয় পার্টি।
এমন পরিস্থিতিতে ভোটার উপস্থিতির হার তুলনামূলক কম হওয়ার আভাসই দিচ্ছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মহামারীর মধ্যে ভোটে আয়োজনের বাধ্যবাধকতার কথা তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাধারণত উপ-নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম হয়ে থাকে। এখন করোনাভাইরাসের মহামারী চলছে।
“কমিশন এবিষয়ে সজাগ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব ধরনের ব্যবস্থা রেখেছে। ভোটার উপস্থিতি কেমন হতে পারে তা নিয়ে ধারণা করাও সমীচীন হবে না। দেখা যাক, কত ভোটার উপস্থিতি হয়।”
১৮ জানুয়ারি সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের মৃত্যুতে বগুড়া-১ এবং ২১ জানুয়ারি ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুতে যশোর-৬ আসন ফাঁকা হয়।
আর ৩ লাখ ৩০ হাজার ৮৯৩ ভোটারের বগুড়া-১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন- সাহাদারা মান্নান (নৌকা), একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির (ধানের শীষ), মোকছেদুল আলম (লাঙ্গল), মো. রনি (বাঘ), নজরুল ইসলাম (বটগাছ) ও ইয়াসির রহমতুল্লাহ ইন্তাজ (স্বতন্ত্র- ট্রাক)।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। সাংবিধান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনটি করছে বলে কোনো ধরনের ক্রাইসিস হওয়ার শঙ্কাও থাকবে না।
“অতীতে তিন মাসের (বিলুপ্ত তত্ত্বাধায়ক ব্যবস্থা) কথা বলে দুই বছর ক্ষমতায় থাকার নজির রয়েছে। এ ধরনের বিষয়ের পুনরাবৃত্তি রোধেই হয়ত ইসি নির্ধারিত সময়ে ভোটটি করে ফেলছে।
“জীবনের মায়া সবার রয়েছে। এ জন্যে ভোটার উপস্থিতিও তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে মহামারীর এ সময়ে। উপ নির্বাচনে কমই হয় ভোটার, তবুও তা বিষয় নয়। যে কজন ভোটার থাকবে, ভোট দেবে তাতে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে। কোনো বাধ্যবাধকতা নেই নির্বাচনের জন্য, এতে শতাংশ ভোট লাগবে।”
পুরনো খবর