দিনাজপুরে গবাদি পশুর মধ্যে গোবসন্ত বা লাম্পি স্কিন (এলএসডি) রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় তা রোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
Published : 19 Jun 2020, 02:01 AM
এ রোগে আক্রান্ত গবাদিপশুর চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পত্র প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ প্রথম দেখা গেছে ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে। এরপরই মাঠে নামে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তদন্ত টিম। তখন দেশের ১২ জেলায় ৪৮ হাজার গরুর মধ্যে এ রোগের লক্ষণ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। দুই বছর পর আর রোগটি দেখা দিল।
গত শতকের মাঝামাঝিতে দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, মোজাম্বিকসহ আফ্রিকার দেশগুলোতে হাজার হাজার গরু লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় এবং শত শত খামার বন্ধ হয়ে যায়।
সম্প্রতি আফ্রিকা মহাদেশে ৪০ শতাংশ গরু এই রোগে মারা গেছে বলে জানিয়েছে কৃষি তথ্য সার্ভিস- এআইএস।
এআইএস বলছে, “মূলত আফ্রিকায় একাধিকবার মহামারী আকারে দেখা গেলেও আমাদের দেশে গরুতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব কখনো মহামারী আকারে দেখা যায় নাই। একটা খামারকে অর্থনৈতিকভাবে ধসিয়ে দেওয়ার জন্য এফএমডি বা খুরা রোগের চেয়ে একে অনেক বেশি ভয়ংকর রোগ হিসেবে ধরা হয়।”
এলএসডি আক্রান্ত গরুর লক্ষণ >> আক্রান্ত গরু প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং খাবার রুচি কমে যায়। >> জ্বরের সঙ্গে মুখ দিয়ে এবং নাক দিয়ে লালা বের হয়। পা ফুলে যায়। সামনের দু’পায়ের মাঝ স্থানে পানি জমে যায়। >> শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া পিণ্ড আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষত সৃষ্ট হয়। ধারাবাহিকভাবে এই ক্ষত শরীরের অন্যান্য জায়গা ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষত মুখের মধ্যে, পায়ে এবং অন্যান্য জায়গা ছড়িয়ে পড়তে পারে। >> ক্ষত স্থান থেকে রক্তপাত হতে পারে। শরীরে কোথায় ফুলে যায় যা ফেটে টুকরা মাংসের মতো বের হয়ে ক্ষত হয়, পুঁজ বের হয়। >> পাকস্থলী অথবা মুখের ভেতরে সৃষ্ট ক্ষতের কারণে গরু পানি পানে অনীহা প্রকাশ করে এবং খাদ্য গ্রহণ কমে যায়। |
লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে রোগটি অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে।
আক্রান্তের লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নিতে খামারিদের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি তথ্য সার্ভিস।
দিনাজপুর জেলার সদর, খানসামা ও বোচাগঞ্জ উপজেলায় গবাদিপশুর লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাবের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এই নির্দেশনা দিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পত্রে আক্রান্ত এলাকার প্রতিটি ইউনিয়নে একজন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বা একজন ভেটেরিনারি সার্জন অথবা একজন প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তার নেতৃত্বে উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অথবা ভেটেরিনারি ফিল্ড অ্যাসিসটেন্ট বা ফিল্ড অ্যাসিসটেন্ট (এআই)-এর সমন্বয়ে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করতে বলা হয়েছে।
লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত প্রতিটি গবাদিপশু সরেজমিনে পরিদর্শন করে চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য মেডিকেল টিমকে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট প্রাণিসম্পদ দপ্তরকে প্রতিদিন চিকিৎসা প্রদান করা গবাদিপশুর মালিকের নাম ও মোবাইল নম্বরসহ ঠিকানা সম্বলিত তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে।