হাই কোর্টে জামিন পাননি ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ

ঢাকার ফ্ল্যাট থেকে ‘ঘুষ-দুর্নীতির’ ৮০ লাখ টাকা উদ্ধারের মামলায় সাময়িক বরখাস্ত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি (প্রিজন্স) পার্থ গোপাল বণিককে জামিন দেয়নি হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2020, 11:19 AM
Updated : 3 June 2020, 11:19 AM

বুধবার বিচারক ওবায়দুল হাসানের ভার্চুয়াল কোর্ট তাকে জামিন না দিয়ে আবেদনটি নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছে।

জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন শফিক আহমেদ ও মাহবুব শফিক।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন খুরশীদ আলম খান।

পরে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভার্চুয়াল আদালত জামিন না দিয়ে আবেদনটি নিয়ে নিয়মিত আদালতে যেতে বলেছেন।”

আইনজীবী মাহবুব শফিক বলেন, “প্রায় এক বছর ধরে পার্থ গোপাল বণিক জেলে থাকলেও মামলাটি এখনও তদন্তাধীন। এখন পর্যন্ত অভিযোগপত্র দেয়নি দুদক। এই গ্রাউন্ডে জামিন চেয়েছিলাম। আদালত জামিন দেননি।”

গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ ডিআইজ পার্থ গোপাল বণিককে জামিন দিয়েছিলেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আবেদন করলে গত বছর ১১ ডিসেম্বর মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চায় হাই কোর্ট।

গত বছর ২৯ জুলাই ধানমণ্ডির নর্থ রোডের (ভূতেরগলি) ২৭-২৮/১ নম্বর বাসার বি/৬ নম্বর ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করার পাশাপাশি পার্থকে গ্রেপ্তার করে দুদক। পরদিন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।

‘অবৈধ পন্থায় অর্জিত অর্থের অবস্থান গোপন ও পাচারের উদ্দেশ্যে’ বাসায় লুকিয়ে রেখে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও অর্থ পাচার আইনের ৪(২) ধারায় অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।

দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, উদ্ধার হওয়া টাকার মধ্যে পার্থের ফ্ল্যাটের দেয়াল কেবিনেটে গেঞ্জিতে মোড়ানো ছিল ৫০ লাখ টাকা। একটি স্কুল ব্যাগ থেকে উদ্ধার করা হয় ৩০ লাখ টাকা।

আটকের সময় ডিআইজি পার্থ সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছিলেন, এই ৮০ লাখ টাকা তার বৈধ আয় থেকে অর্জিত। এর মধ্যে ৩০ লাখ টাকা তার শাশুড়ি দিয়েছেন, বাকি ৫০ লাখ টাকা তার সারা জীবনের জমানো টাকা। ফ্ল্যাটের নিচে থাকা তার ব্যবহারের গাড়িটির মালিকও তিনি নন, তার বন্ধুর গাড়ি ব্যবহার করেন। যে ফ্ল্যাটে থাকেন তাও তার শাশুড়ির বলে দাবি করেছিলেন তিনি।

অন্যদিকে ওই দিন অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া দুদক পরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফ বলেছিলেন, “পার্থের ঘোষিত আয়কর ফাইলে এসব টাকার ঘোষণা নেই। তাই আমদের মনে হয়েছে, এই টাকা অবৈধ আয় থেকে অর্জিত। আর আমরা মনে করি, গাড়ি ও ফ্ল্যাট তার নিজেরই, অবৈধ সম্পদ বৈধ করতে তাদের নামে ক্রয় করেছেন মাত্র।”

২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর নগদ ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, দুই কোটি ৫০ লাখ টাকার এফডিআর, এক কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক ও ফেনসিডিলসহ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ট্রেন থেকে গ্রেপ্তার হন চট্টগ্রামের তখনকার জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস। সে সময় তিনি গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে নিজের ঘুষ বাণিজ্যের পেছনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সেখানকার তৎকালীন ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিকের নাম বলেন।

ওই তথ্যের সূত্র ধরে দুদকের অনুসন্ধানী টিম পার্থ গোপালকে সেগুনবাগিচার কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে ফ্ল্যাট থেকে ওই সব টাকা উদ্ধার করা হয়।

ওই ঘটনায় পার্থ গোপাল বণিককে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।