দুরু দুরু বুক নিয়ে কর্মস্থলে সরকারি চাকুরেরা

বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেওয়া অতি ছোঁয়াচে রোগ কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে কর্মচাঞ্চল্যহীন প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রে সচিবালয় ফিরছে আগের রূপে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2020, 07:57 AM
Updated : 31 May 2020, 11:20 AM

করোনাভাইরাস সঙ্কটকালে বিধি-নিষেধ শিথিল করায় দুই মাস পর রোববার থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে কাজ শুরু করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে সংক্রমণের আতঙ্ক নিয়েই তারা অফিসে এসেছেন। তবে সতর্ক রয়েছেন সবাই।

সকাল থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রবেশ করতে শুরু করলেও দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারছে না। 

সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রাজীব ঘোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যারা হেঁটে প্রবেশ করছেন, তাদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। তবে কোন দর্শনার্থী প্রবেশ করতে পারবেন না আর সাংবাদিকের প্রবেশের বিষয়েও এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

“যেসব কর্মকর্তারা গাড়িতে প্রবেশ করবেন, তাদের নিজ নিজ ভবনে প্রবেশমুখে তাপমাত্র মাপার ব্যবস্থা করা হবে।”

কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়ার পাশাপাশি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা যখন ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে সেই পরিস্থিতিতে খুলে দেওয়া হল অফিস।

রোববার ট্রেন ও লঞ্চ এবং সোমবার থেকে দূরপাল্লার বাস-মিনিবাস চলাচলও শুরু হচ্ছে।

গত ২৬ মার্চ থেকে চলা সাধারণ ছুটির মেয়াদ না বাড়িয়ে ৩১ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অফিস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

এই সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারিকৃত ১৩ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণের পাশাপাশি সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরে অফিসে আসতে বলা হয়েছে। তবে বয়স্ক, অসুস্থ ও সন্তানসম্ভবাদের এ সময় অফিসে আসা মানা।

সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হলেও প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে রোববার থেকে যারা অফিস করছেন তারা অনেকেই সংক্রমণের আশঙ্কা ও আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন।

একাধিক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, যেসব কর্মকর্তা গাড়ি নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করছে তাদের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। তারা সরাসরি অফিস কক্ষে যাচ্ছেন।

সংক্রমণ শঙ্কায় সতর্কতা নিলেও আতঙ্ক প্রকাশ করে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কেউ যদি সংক্রমিত হয়ে থাকেন তা বুঝার উপায় নেই- এখানেই সবার ভয়। অফিসে আসাতে পুরো পরিবারই আতঙ্কে রয়েছে।

সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনে কর্মরত এক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জানান, দর্শনার্থী না থাকায় লিফটগুলোতে তেমন ভীড় নেই। তবে লিফটে চড়লে বিপরীত দিকে মুখ করে দাড়াতে বলা হয়েছে এবং প্রতিটি লিফটের সামনে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নৌ-মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সকাল থেকে তিনি অফিস করছেন এবং প্রায় সকলেই অফিসের এসেছেন।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা সুমন মেহেদী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রায় সব কর্মচারী-কর্মকর্তা অফিস করছেন। মুখে মাস্ক ও সতর্কতা অবলম্বন করেই সবাই কর্মক্ষেত্রে রয়েছেন।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান প্রথম দিন হিসেবে উপস্থিতি অনেক ভাল।

সকালে মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীরা অফিসে না আসলেও দুপুর নাগাদ অনেকেই অফিস আসবেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের তথ্য কর্মকর্তা শেফায়েত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল থেকে মোটামুটি সব কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিস করছেন।”

এদিকে সচিবালয়ের পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি দপ্তরেও কাজ শুরু হয়েছে।

টেলিযোগযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) জাকির হোসেন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সকাল থেকেই কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত হয়েছে এবং সবাই মাস্ক ব্যবহার করছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। মাইক্রোবাসে প্রতি সারিতে ২ জন করে কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতায়াতের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।”