চীন থেকে ২০ হাজার কিট-পিপিই আনছে সরকার

নভেল করোনাভাইরাস শনাক্তে চীন থেকে প্রথম দফায় সরকারিভাবে ১০ হাজার টেস্টিং কিট ও ১০ হাজার ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ (পিপিই) আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2020, 12:24 PM
Updated : 21 March 2020, 12:25 PM

এছাড়া করোনাভাইরাস মোকাবেলায় চীন থেকে বিশেষজ্ঞ আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজনকে শনাক্তের পর থেকে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। শনিবার পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ এ দাঁড়িয়েছে। আর মারা গেছেন দুইজন।

এর আগে এই ভাইরাস শনাক্তে ৫০০ পিসিআর (পলিমেরেজ চেইন রিঅ্যাকশন) কিট দিয়েছে চীন। 

শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, “কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে- কিটস, সুরক্ষা ইকুইপমেন্ট নাই। আমরা ইতোমধ্যে আনার ব্যবস্থা করেছি। চীন রেডি রেখেছে, আমরা তাদেরকে অনেকগুলো ইকুইপমেন্ট দিতে বলে রেখেছিলাম।

”ইতোমধ্যে ১০ হাজার টেস্টিং কিটস ও ১০ হাজার প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট রেডি আছে। যেকোনো সময় চার্টার্ড ফ্লাইটে এগুলো চলে আসবে।”

সরকারের বাইরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও চীন থেকে এগুলো আনার চেষ্টা করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “প্রয়োজনে আমরা চার্টার্ড ফ্লাইটে সেগুলো নিয়ে আসব।”

এ পরিস্থিতিতে জরুরি সেবা খাতের ব্যক্তিদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “অ্যাসেনশিয়াল সার্ভিস মানে পুলিশ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করেন, চিকিৎসক, নার্স, প্রত্যেকেরই ছুটি এ মুহূর্তে বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।”

নতুন করে ১০টি দেশের ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত জানানোর পাশাপাশি কয়েকটি দেশের ফ্লাইট চালু রাখার যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, “জরুরি যোগাযোগের জন্য ইউকে, থাইল্যান্ড, হংকং ও চীনের ফ্লাইট চালু রাখা হয়েছে। যাতে কারও জরুরি বা বিশেষ প্রয়োজন হলে সেই রুটগুলো নিতে পারে।”

বিদেশফেরত কেউ ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে না থেকে ঘুরে বেড়ালে প্রশাসনকে জানানোর আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, “সরকারের স্থির সিদ্ধান্ত হচ্ছে বিদেশ থেকে আসলে বাধ্যতামূলক ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

”দেশবাসীকে বলব, কেউ যদি অমান্য করে তাহলে স্থানীয় প্রশাসনকে অবশ্যই জানাবেন। যারা বিদেশ থেকে ফিরবেন, তাদের প্রত্যেকের হাতে আমরা একটি অমোচনীয় দাগ দিয়ে দিচ্ছি, যাতে সহজে চিহ্নিত করা যায়।”

তিনি আরও বলেন, “দেশবাসীকে আহ্বান জানাব, যারা এই ধরনের লোক, যাদের অবশ্যই কোয়ারেন্টিন প্রয়োজন, তারা যদি ঘুরে বেড়ান, তাহলে আপনারা তাদের চিহ্নিত করবেন এবং স্থানীয় প্রশাসনকে জানাবেন। স্থানীয় প্রশাসন তাদের বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

”আত্মীয়-স্বজনকে বলব, আপনারা বিদেশ থেকে যারা আসবে তাদের বিষয়ে সজাগ থাকবেন। কারণ, কার মধ্যে ভাইরাস আছে আমরা জানি না।”

প্রবাসীদের আপাতত দেশে না আসার আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের যারা প্রবাসী আছেন, সজাগ হোন। দেশে আসা আপাতত পেছান। আমাদের আলাপ হয়েছে বিভিন্ন দেশের। যদি ভিসা শেষ হয়ে যায়, সেটা এক্সটেনশন করে দেবে। সেজন্য তাদের দুশ্চিন্তার কারণ নাই।”

চীনা বিশেষজ্ঞ আনার চেষ্টা

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, কভিড-১৯ মোকাবেলায় চীন থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আনার চেষ্টা করছে সরকার। তিনি বলেন, এজন্য প্রধানমন্ত্রীও সম্মতি দিয়েছেন।

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়ানো নতুন এই ভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নিয়েছে।

জাহিদ মালেক বলেন, “কিছু এক্সপার্ট আনার চিন্তাভাবনা করছি চীন থেকে, যারা চীনের উহানে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিয়েছেন।

“তারা আমাদের দেশের চিকিৎসক-নার্সদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কি কি জিনিসের প্রয়োজন রয়েছে, কোন কোন জায়গায় ঘাটতি রয়েছে সেগুলো তাদের কাছ থেকে আমরা জানব। জেনে আমরা তা পূরণ করার চেষ্টা করব।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্যসেবায় যুক্ত ব্যক্তিদের সুরক্ষায় ইতিমধ্যে কয়েক লাখ পিপিইও মাস্ক এসে পৌঁছেছে। এছাড়া চীন থেকে আরও মাস্ক সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। সেগুলো খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে।