কারও অহম যেন সমন্বিত ভর্তির বাধা না হয়: ইউজিসি চেয়ারম্যান

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাগ্রহের সমালোচনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Feb 2020, 03:08 PM
Updated : 10 Feb 2020, 03:08 PM

সোমবার ইউজিসিতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে গোটা জাতির ‘আকাঙ্ক্ষা’ অপূর্ণ থাকতে পারে না। কারও ইগো যেন অন্যদের প্রভাবিত করতে না পারে সেদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।”

গত ২৩ জানুয়ারি উপাচার্যদের সঙ্গে এক সভার পর সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে সমন্বিত পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির ‘নীতিগত’ সিদ্ধান্তের কথা জানায় ইউজিসি।

কিন্তু গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ডাকসুর সভা থেকে নিজস্ব পরীক্ষার মাধ্যমেই শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়।

ডাকসুর এমন সুপারিশের দুই দিনের মাথায় দেশের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সঙ্গে আলোচনা সভায় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় ‘অনাগ্রহী’ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমালোচনা করেন ইউজিসি চেয়ারম্যান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক থেকে ইউজিসি চেয়ারম্যান পদে আসা অধ্যাপক শহীদুল্লাহ বলেন, ”যদি কেউ সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় না আসে তারা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়বে। আমরা এবার একটি উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাই। এটি চালু হলে আগামীতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না।”

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদাভাবে আলাদা পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয় বলে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দিতে হয়। একই বিষয়ে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা দিতে তাদের ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়।

এ ব্যবস্থার বদলে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এক দিনে এক পদ্ধতিতে নেওয়ার পরিকল্পনায়েই সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থী একবার পরীক্ষা দিলেই চলবে, প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে তাকে গুচ্ছে থাকা কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে, যেভাবে মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।

সরকারের গত মেয়াদে তখনকার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন পক্ষের বিরোধিতায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গতবছর আবারও বিষয়টি বাস্তবায়নে উদ্যোগী হন এবং ২০২০ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত পদ্ধতিতে নেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করন।

দীপু মনির যুক্তি, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া গেলে শিক্ষার্থীদের হয়রানি আর অর্থের অপচয় কমে যাবে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ আরও প্রশস্ত হবে, কারণ এখন ইচ্ছা থাকলেও সব জায়গায় পরীক্ষা দেওয়া তাদের সবার পক্ষে সম্ভব হয় না।

উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে অধ্যাপক শহীদুল্লাহ বলেন, “দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। সান্ধ্য কোর্স বন্ধে উপাচার্য ও সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে এলে শিক্ষক সম্প্রদায়ের ভাবমূর্তিতে ইতিবাচক পরিবর্তন হবে বলে আমি মনে করি।”

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ‘গোটা জাতির’ আগ্রহ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এটা এখন জাতীয় দাবি। জাতির স্বার্থেই আমরা উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করব। ইতিবাচক মনোভাব ও দায়িত্ব নিয়ে উপাচার্যবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্টরা এক্ষেত্রে এগিয়ে আসবেন এ প্রত্যাশা সকলের।”

ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম, অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল আলম, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম শেখ এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন।