সমন্বিত নয়, ঢাবির নিজস্ব ভর্তি পরীক্ষা চায় ডাকসু

সমন্বিত নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরীক্ষার মাধ্যমেই শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2020, 05:24 PM
Updated : 8 Feb 2020, 05:24 PM

শনিবার বিকেলে ডাকসুর কার্যনির্বাহী সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় ভিপি নুরুল হক নূর, জিএস গোলাম রাব্বানী, এজিএস সাদ্দাম হোসেনসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে সন্ধ্যায় জিএস রব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, “১৯৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা রয়েছে, তা বজায় রাখতে নিজস্ব ভর্তি পরীক্ষার পক্ষে রায় দিয়েছে ডাকসু। সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতি কোনোটিতেই যাচ্ছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।”

শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও অর্থ খরচ কমাতে আসন্ন নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতিতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জরি কমিশন-ইউজিসি।

গত মাসে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, “আজ দেশ ও জাতির আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে সমন্বিত পদ্ধতিতে একটি ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হোক, এখানে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই। আমরা যদি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করি তাহলে দেশ ও জাতি আমাদের অভিনন্দিত করবে।” 

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদাভাবে আলাদা পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয় বলে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দিতে হয়। একই বিষয়ে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা দিতে তাদের ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়।

এ ব্যবস্থার বদলে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এক দিনে এক পদ্ধতিতে নেওয়ার পরিকল্পনায়েই সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতি।

এ পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থী একবার পরীক্ষা দিলেই চলবে, প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে তাকে গুচ্ছে থাকা কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে, যেভাবে মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।

ডাকসুর সভায় আরও বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে গোলাম রব্বানী বলেন, “মুজিববর্ষ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যত ভাস্কর্য ও মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনা আছে, সেগুলোর ইতিহাস ও ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য সবগুলোতে পাদটীকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পাইলট প্রজেক্টের আওতায় গণরুম সমস্যার সমাধানে প্রাথমিকভাবে পাঁচটি হলে ‘বাঙ্ক বেড’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।

ডাকসু ভিপি নূর সাংবাদিকদের বলেন, “হলে হলে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য চলে আসছে। সেই প্রেক্ষিতেই আমার দাবি ছিল, হলে হলে প্রশাসনের মাধ্যমে সিট বণ্টন করা, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের শুরু থেকেই সিট বরাদ্দ দেওয়া।

“যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তখন তাদের ছাত্র সংগঠন ছেলেদের হলগুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আমরা আশা করছি, আগামীতে সেটা হবে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সেই আশ্বাস পেয়েছি।”

পরবর্তী ডাকসু নির্বাচন কবে হবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে নূর বলেন, “এ ব্যাপারে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন সভায় এজেন্ডা রেখেছিল। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, পরবর্তী মিটিংয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

সভায় অন্যান্য সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে ডাকসুর বাজেটের ব্যয় হওয়া অর্থের অডিট সম্পন্ন করা। আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রথম ছয় মাসের অডিট সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। তারপর নির্দিষ্ট একটি তারিখে (৭ বা ১০ দিনের মধ্যে) পুরো সময়ের অডিট সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।এজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন অধ্যাপককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।

এছাড়া ডাকসু নেতাদের অভিষেক অনুষ্ঠানের বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নবীন বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, ক্যাম্পাসে পলিথিন ও প্লাস্টিক কাপ ব্যবহার নিষিদ্ধ, বিভিন্ন বিভাগে অতিরিক্ত উন্নয়ন ফি কমানো, ক্যাম্পাসে ভ্রাম্যমাণ দোকান নির্দিষ্টকরণ, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ইজিবাইক চালু, নীলক্ষেত থেকে টিএসসি পর্যন্ত রিক্সা চলাচলের একমুখী লেন তৈরি করা, হলের গেস্টরুমে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ইত্যাদি সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রক্টর ‘শিক্ষার্থীবান্ধব নন’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী ‘যথেষ্ট শিক্ষার্থীবান্ধব নন’ বলে অভিযোগ উঠেছে ডাকসুর সভায়।

ডাকসুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী সভার এক পর্যায়ে এই অভিযোগ তোলেন। ডাকসুর অন্যান্য সদস্যরাও তাকে সমর্থন জানান বলে সভায় উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে আরিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে স্যার যথেষ্ট শিক্ষার্থীবান্ধব নয়, উনাকে আরও বেশি শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়া উচিত। একজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের কাছে এই অভিযোগগুলো শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত করে। আমি এই বিষয়টিই সভায় বলেছি। আমার এই বক্তব্যক সমর্থন জানিয়েছেন ডাকসুর অন্য সদস্যরা।”