ফজলে হাসান আবেদের ইদান পুরস্কার নিল পরিবার

ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্যার ফজলে হাসান আবেদের পরিবারের হাতে ইদান পুরস্কার তুলে দিয়েছেন এর প্রবর্তক ড. চার্লস চেন ইদান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2020, 07:11 PM
Updated : 23 Jan 2020, 07:11 PM

অর্থমূল্যের দিক থেকে শিক্ষার উন্নয়নে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পুরস্কার এটি।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার বিকালে ব্র্যাকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ইদান পুরস্কারের স্বর্ণপদকটি গ্রহণ করেন তার মেয়ে ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন তামারা আবেদ এবং সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন তার ছেলে ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্স ও আলট্রা পুওর গ্র্যাজুয়েশন কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক শামেরান আবেদ।

পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাপী শিক্ষার উন্নয়নে স্যার ফজলে হাসান আবেদের নিবেদিতপ্রাণ ভূমিকার কথা স্মরণ করেন চার্লস চেন।

তিনি বলেন, “প্রকৃত সহানুভূতি, সাহস ও বিশ্বাসের সঙ্গে মানুষের সেবায় স্যার ফজলে তার জীবন উৎসর্গ করেছেন। চারপাশের মানুষকে নিরাশা ত্যাগ করে আশাবাদী হতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তিনি। যে লক্ষ কোটি মানুষের জীবন তিনি পাল্টে দিয়েছিলেন, বিশেষ করে সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর মানুষ তাকে আশার স্ফুলিঙ্গ হিসেবে আজীবন মনে রাখবে।

“এশিয়া, আফ্রিকা এবং তারও বাইরে জীবন বদলে দিতে সক্ষম শিক্ষা কার্যক্রম প্রসারে ইদান প্রাইজ ফাউন্ডেশন ব্র্যাকের সঙ্গে ভবিষ্যতেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবে। আমাদের যৌথ প্রচেষ্টা প্রান্তিক শিশুদের আনন্দের সঙ্গে শেখার সুযোগ করে দেবে এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের উৎপাদনশীল ও সমৃদ্ধ জীবনযাপনে ভূমিকা রাখবে।”

শিক্ষার উন্নয়নে যুগান্তকারী অবদানের জন্য ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্যার ফজলে হাসান আবেদ ‘ইদান প্রাইজ ফর এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট লরিয়েট’ ঘোষিত হন।

অনুষ্ঠানে শামেরান আবেদ ধন্যবাদসূচক বক্তব্য পাঠ করেন যা স্যার ফজলে পুরস্কারটি ঘোষণা হওয়ার পর রচনা করেছিলেন।

বক্তব্যে বলা হয়, “ব্র্যাক ও আমার কাজের এই স্বীকৃতি আমাদের গভীর কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছে। ইদান প্রাইজের সূত্রে প্রাপ্ত বৃহৎ তহবিলটি আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমের আরো বিস্তার ঘটাতে বিপুলভাবে সহায়ক হবে। আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষা হচ্ছে বৈষম্য মোচনের সর্বোত্তম হাতিয়ার। আমি এমন একটি বিশ্বের স্বপ্ন দেখি যেখানে আমাদের মধ্যে দরিদ্রতম মানুষও লক্ষ্যবহ ও মর্যাদার জীবন যাপন করার সুযোগ পাবেন। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার অভিযাত্রায় সকলকে সামিল হওয়ার জন্য আমি আন্তরিক আহ্বান জানাই।”

তামারা আবেদ বলেন, “বাবার পক্ষ থেকে আজ এই পুরস্কার গ্রহণ করতে পেরে আমরা অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। তার বিপুল কর্মযোগের উত্তরাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা বদ্ধপরিকর।”

‘ইদান প্রাইজ ফর এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট লরিয়েট’ হিসেবে স্যার ফজলেকে একটি সোনার মেডেল, একটি সার্টিফিকেট এবং তিন কোটি হংকং ডলার (৩০ মিলিয়ন হংকং ডলার বা ৩.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৩৩ কোটি টাকা) মূল্যমানের অর্থ প্রদান করা হয়েছে। অর্থ পুরস্কারের অর্ধেক নগদ অর্থ এবং বাকি অর্ধেক একটি প্রকল্পের তহবিল হিসেবে প্রদান করা হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ জানান, পুরস্কারের এই তহবিল বাংলাদেশ, উগান্ডা ও তানজানিয়ায় খেলাভিত্তিক প্রাক-শৈশব উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের উদ্ভাবনগুলোর বিস্তার এবং বাংলাদেশে খেলাভিত্তিক শিশু পরিচর্যার একটি নতুন মডেল উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ইদান পুরস্কারের অংশ হিসেবে প্রাপ্ত প্রকল্প তহবিলটি (২০ লাখ মার্কিন ডলার বা ১৬.৫ কোটি টাকা) আগামী তিন বছর প্রাক-শৈশব উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষণা, উদ্ভাবন ও সবচেয়ে কার্যকর সমাধানগুলোর বিস্তারে ব্যয় করবে ব্র্যাক। তহবিলটির একাংশ বাংলাদেশে খেলাভিত্তিক শিশু পরিচর্যার সামাজিক ব্যবসা মডেলের একটি পাইলট প্রকল্প পরিচালনায় ব্যয় করা হবে।

শিক্ষার মাধ্যমে উত্তম বিশ্ব সৃষ্টির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১৬ সালে হংকংয়ে ইদান পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়।