‘ব্যাংক কমিশন’র গঠনের প্রস্তাবের পর দুদকের আইনজীবী বদল

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করতে ‘ব্যাংকিং ইনকোয়্যারি কমিশন’ গঠনের পক্ষে বক্তব্য দেওয়ার পর তা প্রত্যাহার করে নিতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2019, 06:32 PM
Updated : 22 Oct 2019, 06:32 PM

মঙ্গলবার আদালতে দাখিল করা এ সংক্রান্ত হলফনামা থেকে ওই বক্তব্য বাদ দিতে বৃহস্পতিবার সম্পূরক আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

হলফনামাটি দাখিল করেছিলেন দুদকের আরেক আইনজীবী হাসান এম এস আজিম। কিন্তু পরে তিনি মামলা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলে তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।

যে রিট আবেদনে হাই কোর্টে দুদককে এই হলফনামা দিতে হয়েছে, তার আইনজীবী মনজিল মোরসেদ মনে করছেন, হলফনামায় ব্যাংক কমিশন নিয়ে বক্তব্যের জেরেই আইনজীবী আজিমকে মামলা থেকে বাদ দিয়েছে দুদক।

ব্যাংক খাতে অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ অনুমোদনে অনিয়ম, সুদ মওকুফ সংক্রান্ত বিষয় তদন্ত ও সুপারিশ প্রনয়নে কমিশন গঠন করতে গত ২৩ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট ৫ সচিবসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে উকিল নোটিস পাঠিয়েছিল মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ।

এরপর সংগঠনটির পক্ষে মনজিল মোরসেদ হাই কোর্টে জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন।

ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি ৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে রুলসহ আদেশ দেয় বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্টে বেঞ্চ।

আদেশে গত ২০ বছরে এক কোটি টাকার উপরে ঋণ খেলাপি, ঋণের সুদ মওকুফ, অর্থপাচার ও অর্থপাচারকারীদের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রতিবেদন চায় আদালত।

কয়েক দফা সময় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ খেলাপি বা অর্থপাচারকারীদের তালিকা আদালতে দাখিল না করলেও গত ১৬ মে ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে সার্কুলার জারি করে।

রিট আবেদনকারী পক্ষও সম্পূরক আবেদন করলে তা নিয়ে আইনি লড়াই চলতে থাকে।

বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ২৩ জুলাই ওই সার্কুলার নিয়ে রুল জারি করে।

দীর্ঘ অবকাশের পর গত ১৩ অক্টোবর থেকে সে রুলের শুনানি শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দুদকের পক্ষে আদালতে হলফনামা দাখিল করেন আইনজীবী আজিম।   

এরপর এই মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি শুধু এতটুকু বলব যে, আমি ব্যক্তিগতভাবে বিব্রত অবস্থায় আছি।

“বিব্রতবোধ করাতে আমি দুর্নীতি দমন কমিশনকে এটা জানিয়েছি। কমিশন নতুন আইনজীবী দিয়েছে। এর বাইরে আমি কিছু বলতে পারব না।”

রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুদকের পক্ষে হলফনামা দিয়ে ব্যাংক কমিশনকে সমর্থন করা হল। এগুলো বলার পর আজ সেই আইনজীবীর নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “এই বিষয়টাতেই (আইনজীবী পরিবর্তন) তো বোঝা যাচ্ছে আমরা কেন কমিশন চাচ্ছি। ব্যাংকের কার্পেটের তলে যে বিষয়গুলো বিভিন্নভাবে লুকিয়ে আছে, এই বিষয়গুলো চাপা দিতে চাচ্ছে প্রভাবশালী লোকজন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর যে ঘোষণা, তার সাথে এই বিষয়টি অসামঞ্জস্যপূর্ণ।”

ব্যাংক খাতে দুর্নীতি রোধের জন্য এই কমিশন করাটা ‘খুব জরুরি’ বলে মনে করেন মনজিল।

জানতে চাইলে এ মামলায় নতুন নিয়োগ পাওয়া আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটমকে বলেন, “আইনজীবী হাসান আজিম কোনো কারণে এ মামলাটি আর করবে না, সে বিব্রতবোধ করেছে।

“কমিশন আজ দুপুরে আমাকে ফোন করে এ মামলায় অ্যাসাইন করেছে। পরে আমি কোর্টে গিয়ে কথা বলেছি, যে হলফনামা দেওয়া হয়েছে তার কয়েকটি প্যারাগ্রাফ দুদক আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমি কালকে পাওয়ার দিয়ে অ্যাপিয়ার করব এবং একটা লিখিত দিব যে, কয়েকটা প্যারা যেন বাদ দেওয়া হয়।”

কোন কোন প্যারাগুলো বাদ দেওয়ার আবেদন করবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের মোদ্দা কথা হল ব্যাংকিং ইনকোয়্যারি কমিশন গঠন সরকারের সিদ্ধান্ত। এখানে দুদকের করার কিছু নাই। সরকারের কোনো পলিসি ডিসিশনে দুদকের ইন্টারফেয়ার করার বা উপদেশ দেওয়ার কোনো ক্ষমতা নাই, যদি গভমেন্ট আমার কাছে না চায়।

“দুদক আইনের ১৭ ধারায় দুদকের এখতিয়ার সম্পর্কে বলা আছে। তাই কমিশন হবে কি হবে না, এটা আমাদের ব্যাপার না। উই আর নট কনসার্ন উইথ দ্যাট। কাজেই ইনকোয়্যারি কমিশণ গঠন সংক্রান্ত প্যারাগুলো বাদ যাবে।”

এদিকে দুদকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইনজীবী হাসান এম এস আজিম যে হলফনামাটি দাখিল করেছেন, সে হলফনামার কিছু বক্তব্যের সাথে দুদক একমত না। তাই তাকে দুদকের আইনজীবী প্যানেল থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”