মশা নিয়ে সরকারের বছরের পরিকল্পনা জানতে চায় হাই কোর্ট

বছরজুড়ে এইডিস মশা নিধন ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকার কোনো কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে কি না, তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2019, 02:25 PM
Updated : 20 August 2019, 02:47 PM

বিষয়টি জেনে আগামী সোমবার আদালতকে জানাতে ওই বেঞ্চ সংশ্লিষ্ট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেয়।

বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক বলেন, “এ বছর মশার প্রকোপ দেখা দিয়েছে, সেটা যে আগামীতে যে হবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এজন্য মশা নিধন ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের কর্মপরিকল্পনা থাকা দরকার। পাশের দেশ ভারতের কলকাতায় যেমনটা রয়েছে। তারা মশা নিধনে এরিয়াল স্প্রে করে থাকে।”

গত দুই যুগ ধরে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গ জ্বর দেখা গেলেও এবার মশাবাহিত এই রোগ প্রকট আকারে দেখা দেয়। ডেঙ্গুতে এবছর এই পর্যন্ত ৫৬ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছে প্রায় দুইশ জন।

এবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গুর প্রকোপের আগাম সতর্কবার্তা দিলেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি বলে পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিশেষজ্ঞদের আগাম সতর্কতা না শোনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে মন্তব্য করে বিচারপতি তারিক উল হাকিম বলেন, “মশা নিধনে সিটি করপোরেশনগুলো নতুন ওষুধ ছিটাচ্ছে। কিন্তু এইডিস মশার প্রকোপ বাড়তে পরে, অনেক আগে থেকেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছিল। সিটি করপোরেশন তা আমলে নেয়নি। এক্ষেত্রে দুই সিটি করপোরেশনের অবহেলা রয়েছে। শুরুতেই স্থান নির্ধারন করে মশা নিধনে পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল।’

মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের আনা নতুন ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে কথা বলেন বিচারক সোহরাওয়ার্দী।

উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী ভর্তি হচ্ছে। রোগীর সংখ্যা দেখলেই বোঝা যাচ্ছে এই ওষুধ কতটা কার্যকর। যখন রোগী ভর্তি শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে, তখন প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত হাসপাতালে রোগী ভর্তি বন্ধ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের উদ্বেগ থাকবেই।”

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী

এর আগে শুনানিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাইনুল হাসান বলেন, মশা নিধনে ও সচেতনতা সৃষ্টিতে উত্তর সিটি করপোরেশনকে প্রায় ১৬০০ ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে ২২০০ অতিরিক্ত জনবল নিয়োগের আদেশ দেওয়া হয়েছ এবং ১৫ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।

এ পর্যায়ে বিচারক বলেন, “মশা তো কমছে না। প্রতিদিনই প্রায় দুই হাজারের কাছাকাছি লোক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।”

উত্তর সিটি করপোরেশনের আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু বলেন, ৪০ হাজার লিটার নতুন ওষুধ কেনা হয়েছে। আগস্ট মাস থেকে এই ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

আদালত বলেন, “নতুন ওষুধে মশা কি মরছে? নাকি দক্ষিণের মশা উড়ে উত্তরে চলে যায়?”

আইনজীবী বলেন, অনেকটা কার্যকর। গত ১১ তারিখ থেকে তা ছিটানো হচ্ছে।

বিচারক বলেন, নতুন জনবল নিয়োগ করেছেন তারা কোথায় কিভাবে কতক্ষণ কাজ করছে তার বিস্তারিত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবেন।

দুই সিটি করপোরেশনকে সোমবার এই প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।