ফের রাজু ভাস্কর্যে বসে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চান ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধরা

আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আশ্বাসের পরও দাবি পূরণ না হওয়ায় আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য চত্বরে অবস্থান নিয়েছে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 May 2019, 10:52 AM
Updated : 27 May 2019, 10:54 AM

আগের রাতে অবস্থান নেওয়ার পর সোমবার দুপুরে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলন তারা বলেন, তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ চান। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন তারা বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নেবে।

এক সপ্তাহ আগে গত ২০ মে রাতে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে দলের চার জ্যেষ্ঠ নেতা ও ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সপ্তাহ ধরে চালিয়ে আসা বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ না পাওয়া বিক্ষুব্ধরা।

ওই বৈঠকে তদন্তের মাধ্যমে ছাত্রলীগের কমিটির ‘বিতর্কিত’ পদগুলো শূন্য ঘোষণা করে যোগ্যতার ভিত্তিতে সেসব পদ পূরণ করার পাশাপাশি মধুর ক্যান্টিনে মারামারির ঘটনা এবং টিএসসিতে আগের শনিবার রাতের হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দেওয়া হয় বলে তারা জানান।

সোমবার দুপুরে রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষুব্ধদের নেতা ও গত কমিটির উপদপ্তর সম্পাদক শেখ নকিবুল ইসলাম সুমন সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের একটি সুলিখিত গঠনতন্ত্র রয়েছে তবুও আমরা বিশ্বাস করি, ছাত্রলীগের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার যে কোনো কথাই আমাদের শিরোধার্য। তিনিই আমাদের সর্বোচ্চ গঠনতন্ত্র।

“আমরা সকল অনিয়ম অন্যায়ের সুষ্টু বিচার চাই। রাজপথে অনেক শ্রম দিয়েছি, অনেক ঘাম ঝড়িয়েছি, আজ আমরা আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রীর সঙ্গে একটিবার দেখা করতে চাই। উনি আমাদের যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা বিনা বাক্যে মাথা পেতে নেব।”

আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি পূরণে উদাসীনতার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ১৭ জন বিতর্কিত নেতার প্রকাশ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ১১ দিন কেটে গেলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।তারা নিজ থেকেই যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেগুলো রক্ষা করেননি।”

ছাত্রলীগের গত কমিটির কর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক রাকিব হোসেন, প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু, সমাজসেবা সম্পাদক রানা হামিদ, রোকেয়া হল শাখার সভাপতি বিএম লিপি আক্তার, কুয়েত মৈত্রী হল শাখার সভাপতি ফরিদা পারভিন ও সাধারণ সম্পাদক শ্রাবনী শায়লা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়েছিল এক বছর আগে। গত ১৩ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পরই অসন্তোষ শুরু হয়।  

কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে আসেন অর্ধশত নেতা-কর্মী; যাদের কেউ পদ পাননি, কেউবা কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে ক্ষুব্ধ।

সংবাদ সম্মেলন শুরুর পরপরই সেখানে হামলা চালিয়ে তা পণ্ড করে দেয় আগে থেকেই সেখানে অবস্থান নেওয়া পদ পাওয়া শতাধিক নেতা। হামলায় ছয় নারী নেত্রীসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন।

এরপর কমিটি পুনর্গঠন চেয়ে ‘একযোগে পদত্যাগের’ ঘোষণা দেন বিক্ষুব্ধরা। কমিটিতে স্থান পাওয়া বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন তারা।

তাদের ওই প্রতিক্রিয়ার পর ১৭ জনকে ‘দাগি’ হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানান ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা।  পরে ৯৭ জনের তালিকা প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে আর কর্মসূচিতে না যাওয়ার ঘোষণা দেন বিক্ষুব্ধরা।

এরপর ১৮ মে গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে হামলা ও মারধরের শিকার হন বিক্ষুব্ধ অংশের নেতাকর্মীরা। এরপর থেকে তারা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে আসছিলেন।