শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনসহ পাঁচটি স্থানে টিকেট বিক্রি করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
আগাম টিকেট বিক্রির তৃতীয় দিন বিক্রি হচ্ছে ২ জুন ট্রেন যাত্রার টিকেট। এদিন ৩৩টি আন্তঃনগর এবং চারটি বিশেষ ট্রেনসহ ৩৭টি ট্রেনের ২৮ হাজার ২২৪টি টিকেট বিক্রি হচ্ছে।
যাত্রীদের ভোগান্তি এড়াতে এবারই প্রথম কমলাপুরের বাইরেও টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা রেখেছে রেলওয়ে।
সকালে কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে টিকেট প্রত্যাশীদের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে।
কমলাপুর স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যাতায়াতকারী ১৬টি ট্রেনের ১৪ হাজার ৯৫টি টিকেট বিক্রি হচ্ছিল। এরমধ্যে কাউন্টার থেকে পাঁচ হাজার ৯৪৪টি এবং অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপসে আট হাজার ১৫১টি টিকেট।
বিমান বন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী ৭টি আন্তঃনগর ট্রেনের চার হাজার ৮৭৯টি টিকেট বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে দুই হাজার ৫৪৮টি অনলাইনে এবং দুই হাজার ৩৩১টি টিকেট কাউন্টার থেকে বিক্রি হচ্ছে।
তেজগাঁও স্টেশন থেকে জামালপুরগামী পাঁচটি ট্রেনের তিন হাজার ৪৪৪টি টিকেট বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে ৬৪৪টি অনলাইনে এবং ৬১৪টি কাউন্টারে বিক্রি হচ্ছে।
বনানী রেলওয়ে স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জ রুটের দুটি ট্রেনের এক হাজার ২৫৮টি টিকেট বিক্রি হচ্ছে। ৬৪৪টি টিকেট অনলাইনে বাকি ৬১৪টি টিকেট কাউন্টারে দেওয়া হচ্ছে।
প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের মতো তৃতীয় দিনেও অনলাইনে এবং অ্যাপ থেকে টিকেট কিনতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন টিকেট প্রত্যাশীরা।
শুক্রবার ভোরে সেহরির পর কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়ানো রাশেদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৃহস্পতিবার অনলাইন বা মোবাইল অ্যাপ থেকে চেষ্টা করেও টিকেট কিনতে পারেননি তিনি।
“এজন্য আজ ভোরে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এখানে আসার পরও মোবাইল ফোন থেকে চেষ্টা করেই যাচ্ছি। কমপক্ষে ৪০ বার চেষ্টা করেও অ্যাপসে ঢুকতে পারিনি। তো ৫০ ভাগ টিকেট অনলাইনে দিয়ে কী লাভ হল?"
বেসরকারি চাকরিজীবী মো. বাপ্পী ইসলাম সকাল ৬টার দিকে কমলাপুর আসেন। বেলা সাড়ে ১২টায়ও লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। তিনিও মোবাইল অ্যাপে টিকেট পাননি।
“অ্যাপস এ টিকেট নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। কয়েকবার চেষ্টা করে ও পারি নাই। এখন এখানে পাই কি না দেখি।”
রাসেল আহমেদ একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক বলেন, "আসছি ভোরে, বড় লাইন ছিল। আমার সিরিয়াল ছিল ২৮৪। বেলা ১টায় শোভন চেয়ারের টিকেট পেলাম। খুবই ভালো লাগছে।"
আবুজর গিফারী নামে একজন অভিযোগ করেন, টিকেট ধীরগতিতে দেওয়া হচ্ছে। এসি বা কেবিনের টিকেট নিতে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখছে। এজন্য সময় বেশি লাগছে।
"খুবই ধীরে টিকেট বিক্রি করছে। আমি এখানে এসেছি ভোরে। ৯টা থেকে টিকেট দেওয়া শুরু হয়েছে। এখন বাজে পৌনে ১টা। টিকেট দেওয়া হয়েছে মাত্র ৯০ জনকে।"
এ বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, অনলাইনের সমস্যা ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে।
“অনলাইনে সমস্যা কেটে যাবে। আমাদের বিশেষজ্ঞ দল সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। এখন লোকজন টিকেট পাচ্ছে।”
চাহিদা অনুযায়ী কমলাপুরে নারীদের আরেকটি কাউন্টার খুলে দেওয়া হবে বলে জানান আমিনুল।
টিকেটপ্রত্যাশী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহমেদ ফেরদৌস বলেন, “অ্যাপসে টিকেট দেওয়া হবে বলে সেখানে বার বার ট্রাই করেছি, এতে আমার সময় নষ্ট হয়েছে। বাধ্য হয়ে সেই লম্বা লাইনেই দাঁড়াতে হয়েছে। তারপরও টিকেট পাব কি না জানি না।"
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সালাহ উদ্দিনকে চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের টিকেটের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মোবাইল থেকে অনলাইনে টিকেটের জন্য চেষ্টা করতে দেখা যায়।
তিনি বলেন, "ভাই, রেলের ওয়েবসাইটে গিয়ে বার বার চেষ্টা করছি, আইডি নাম্বার দিয়ে সিকিউরিটি কোড দেওয়ার পর 'কমফার্ম ফর রিসাবমিশন' লেখা এসে থেমে যাচ্ছে। গতরাত থেকে এভাবেই চেষ্টা করছি, কিন্তু টিকেট কনফার্ম করতে না পেরে ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছি।"
সালাহ উদ্দিনের মতো একই ধরনের অভিযোগ একটি বায়িং হাউজের কর্মী আসিফ মাহমুদের।
তিনি বলেন, "আমি অনলাইনে টিকেট পাইনি, যে কারণে সেই আগের ভোগান্তি নিয়েই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছি।"
পদ্মা লাইফ ইন্সুরেন্সের এক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন সেহরির খেয়ে টিকেটের জন্য বিমান বন্দর স্টেশনের লাইনে এসে দাঁড়ান।
সকাল সাড়ে ১০ টায় হাতে টিকেট পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, "এখানে যারা টিকেট দিচ্ছেন তারা ইচ্ছে করেই দেরি করে টিকেট ছাড়ছেন। যে কারণে একটি টিকেট দিতে ৫/৬ মিনিটের বেশি সময় লাগছে।"
তবে এই স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মাহমুদুল হাসানের দাবি, এই দেরি ইচ্ছে করে করা হচ্ছে না।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে "একজন টিকেট প্রত্যাশীর নাম, মোবাইল নাম্বার, জাতীয় পরিচয়পত্র, গন্তব্যসহ বিস্তারিত তথ্য সার্ভারে দিয়ে একটা নিবন্ধন করার পর টিকেট রেডি হয়। তাই এই সময়টুকু লাগতেই পারে।"
বিমান বন্দর স্টেশনের চারটি কাউন্টার থেকে চট্টগ্রামগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, তুর্না, চট্টলা ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের এবং নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেসের টিকেট দেওয়া হচ্ছে। এসব কাউন্টারের মধ্যে নারীদের জন্য একটি আলাদা কাউন্টার রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
বনানী রেলওয়ে স্টেশন থেকে নেত্রকোনোগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ও হাওড় এক্সপ্রেসের আগাম টিকেট দেওয়া হচ্ছে।
সকাল থেকেই এ স্টেশনের দুইটি কাউন্টার থেকে টিকেট বিক্রি করা হয়। বেলা ১১টার মধ্যে লাইনে থাকা সবাই টিকেট পেয়েছে বলে জানিয়েছেন এই স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. ফজলুল হক।
তিনি বলেন, “এখান থেকে আমরা কাউন্টারের ৬১৯টি টিকেট বিক্রি করছি। সকাল ৯টা থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত যাত্রীরা লাইনে থেকে টিকেট নিয়েছে। আর কিছু টিকেট আছে, যে আগে আসবেন, আগে পাবেন।”
বনানী রেলওয়ে স্টেশন থেকে দিনে মোহনগঞ্জ রুটের দুটি ট্রেনের এক হাজার ২৫৮টি টিকেট বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ৬৩৯টি টিকেট অনলাইনে বিক্রি হওয়ার কথা রয়েছে।