অভিজিৎ হত্যা: জিয়া-ফারাবীসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে

ব্লগার-লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক এবং ‘উগ্রপন্থি’ ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 April 2019, 02:05 PM
Updated : 1 August 2019, 12:15 PM

ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইবুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান বৃহস্পতিবার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

পলাতক দুই আসামি হলেন- সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে জিয়া এবং আকরাম হোসেন ওরফে আবির। এর মধ্যে জিয়াকে ধরিয়ে দিলে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা রয়েছে।

কারাগারে থাকা আসামিরা হলেন- শফিউর রহমান ফারাবী, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, মো. মুকুল রানা ওরফে শরিফুল ইসলাম ওরফে হাদী, মো. আরাফাত রহমান।

এছাড়া ১৫ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতির যে আবেদন করেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা, তাও অনুমোদন করেছেন বিচারক।  

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের চার বছর পর গত ১৩ মার্চ ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনসারীর আদালতে এই অভিযোগপত্রটি দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম।

আসামিদের মধ্যে চার বছর আগের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে করা আরেকটি মামলায় ফারাবীকে বুধবারই খালাস দেয় আদালত।

তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ফারাবী অভিজিৎ ছাড়াও সিলেটের অনন্ত বিজয় হত্যাকাণ্ডসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামি।

অভিজিৎ হত্যামামলার আসামিদের মধ্যে ফারাবী ছাড়া বাকি সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য। 

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আসামি মোজাম্মেল হুসাইন, আকরাম হোসেন, হাসান ও আবু সিদ্দিক হত্যাকাণ্ডের দুই মাস আগে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের ১৯২/২ নম্বর বাসা ভাড়া নিয়ে অভিজিৎ রায়কে বিভিন্ন স্থানে অনুসরণসহ হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করেন।

আসামি মোজাম্মেল রেকি টিমের নেতৃত্বে থেকে অপারেশন শাখার মুকুল রানাকে অনুসরণসহ এ হত্যাকাণ্ডের সার্বিক সহযোগিতা এবং আসামিদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অপারেশন শাখার সদস্য আসামি আরাফাত রহমান, আলী ওরফে খলিল, অনিক এবং  অন্তু  সাংগঠনিকভাবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন টার্গেট ব্যক্তিকে হত্যা করার। 

অভিজিৎকে তারা চারজনই চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন বলে অভিযোগপত্র বলা হয়। এসময় অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও চাপাতির আঘাতে একটি আঙুল হারান।

অপারেশন শাখার চারজন আসামি যাতে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে নিরাপদে পালিয়ে যেতে পারে তার জন্য চারপাশে বেষ্টনি করে রাখে আসামি জিয়া, সেলিম, মুকুল রানা, মোজাম্মেল, আবু সিদ্দিক ও আকরাম।

আসামিদের মধ্যে মারা যাওয়ার কারণে মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন তিনজন।  

মান্না ইয়াহিয়া ওরফে মান্নান রাহি ও আবুল বাশার চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান।

হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া দলটির নেতৃত্বে থাকা মুকুল রানা ওরফে শরিফুল ২০১৬ সালের ১৯ জুন ঢাকার খিলগাঁওয়ে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

সেলিম, হাসান, আলী ওরফে খলিল, আনিক ও অন্তুর পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতির জন্যও আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন সময়ে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হলেও তদন্তে তাদের অপরাধ সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ না পাওয়ায় সাত জনের নামে অব্যাহতির আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এরা হলেন - সাদেক আলী ওরফে মিঠু, মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান, আমিনুল মল্লিক, জাফরান হাসান, জুলহাস বিশ্বাস, আব্দুর সবুর ওরফে রাজু সাদ ও মাইনুল হাসান শামীম।  

এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৩৪ জনকে।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ৯টার দিকে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎকে। 

আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

পরে ২৭ ফেব্রুয়ারি অভিজিতের বাবা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অজয় রায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যামামলাটি করেন।

পুরনো খবর