উপজেলা: চার ধাপের এক চতুর্থাংশ চেয়ারম্যান বিনা ভোটে পার

এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম চার ধাপে ৪৫৯ উপজেলায় এক চতুর্থাংশেই চেয়ারম্যান পদের একক প্রার্থীরা বৈতরণী পার হয়ে গেছেন বিনা ভোটে।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 March 2019, 04:43 AM
Updated : 29 March 2019, 04:47 AM

এসব উপেজলায় সব মিলিয়ে ২২৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১১২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।

অবশ্য ভোট স্থগিত, আদালতের আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় ও শেষ মুহুর্তে প্রার্থিতা ফিরিয়ে আনার নির্দেশনার বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি না হওয়ায় ১৬ জন একক প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণার আনুষ্ঠানিকতা বিলম্বিত হচ্ছে। মামলা নিষ্পত্তির পর এই সংখ্যায় কিছু হেরফের হতে পারে বলে নির্বাচন পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা জানান।

নির্বাচন কমিশনের উপ সচিব মো. আতিয়ার রহমান জানান, চতুর্থ ধাপের ১৫টি উপজেলায় তিনটি পদেই একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত রয়েছে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে এরকম আরও ১৫টি উপজেলা রয়েছে।

পঞ্চম উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট হয় ১০ মার্চ। এরপর ১৮ মার্চ দ্বিতীয় এবং ২৪ মার্চ তৃতীয় ধাপের ভোট হয়। রোববার হবে পঞ্চম ধাপের ভোট। ১৮ জুন শেষ ধাপের ভোটে শেষ হবে এবারের উপজেলা নির্বাচন।

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ-বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের তালিকা (প্রাথমিক)

 

তফসিল হয়েছে

ভোট হয়েছে বা হবে

বিনা ভোটে চেয়ারম্যান

বিনা ভোটে ভাইস চেয়ারম্যান

বিনা ভোটে নারী ভাইস চেয়ারম্যান

কোনো পদেই ভোট লাগছে না এমন উপজেলার সংখ্যা

প্রথম

৮৭

৭৮

১৬

দ্বিতীয়

১২৯

১১৬

২৩

১৪

১২

তৃতীয়

১২৭

১১৭

৩৩

১৪

চতুর্থ

১২২ (রোববার ভোট হবে)

১২৬ (*কম বেশি হবে)

৪০*

২৩*

২৭*

১৫

মোট

৪৬৫

৪৫৯ *

১১২

৫২

৫৯

৩০

ইসির সহকারী সচিব আশফাকুর রহমান জানান, চতুর্ধ ধাপে ভোলা সদর, মনপুরা, চরফ্যাশন; যশোরের শার্শা; ময়মনসিংহের গফরগাঁও;  ঢাকার সাভার, কেরানীগঞ্জ; কুমিল্লার লাকসাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ, দেবিদ্বার, চৌদ্দগ্রাম; নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, বাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও ফেনীর পরশুরাম- এই ১৫ উপজেলায় সব পদেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিরা নির্বাচিত হচ্ছেন।

“কিছু একক প্রার্থী এখনও আটকে রয়েছেন। নির্বাচনও এক ধাপ থেকে অন্যধাপে নেওয়া হয়েছে। সব কিছুর নিষ্পত্তি শেষে পূর্ণাঙ্গ তথ্য চতুর্থ ধাপের ভোটের পর চূড়ান্ত হবে। পঞ্চম ধাপের ভোটও বাকি আছে।”

এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে উপজেলায়। একাদশ সংসদ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলা বিএনপি স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।

২০১৪ সালে এর আগের নির্বাচনেও পাঁচ ধাপে ভোট হয়। আওয়ামী লীগ-বিএনপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় দুই ধাপে; শেষে ব্যবধান বাড়িয়ে বেশিরভাগ উপজেলায় জয় পায় আওয়ামী লীগ।

তার আগে ২০০৯ সালে ২২ জানুয়ারি এক দিনেই দেশের সব উপজেলায় ভোট হয়। তাতে ১২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

এবারের উপজেলা নির্বাচনে শতাধিক প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলছেন, যা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, তা নির্বাচন হয় কী করে?

তিনি বলেন, “আমার মতে নির্বাচন মানেই হচ্ছে একাধিকের মধ্যে বাছাই। তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনদের ইংরেজিতে ইলেকটেড না বলে সিলেকটেড বলা যেতে পারে কী?”

প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীনভাবে জনপ্রতিনিধির পদে আসীন হওয়ার রেওয়াজ গণতন্ত্রের জন্য ‘সুসংবাদ নয়’ বলেও মন্তব্য করেন এই নির্বাচন কমিশনার।

কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে দশম সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ জন সাংসদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে আদালতের রায়ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের পক্ষে যায়।

সে সময় আদালতের রায়ে বলা হয়, “সংবিধানের সুস্পষ্ট বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হলে কোনো আইন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা যায় না। এ কারণে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৩ জন সংসদ সদস্যের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই।”

আরও খবর