তরুণরা সঠিক ইতিহাস না জানলে ‘সব অর্জন বৃথা’

পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণমুক্তির পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক, শোষণহীন ও সমতার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে লড়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা, সেই পাঠ এখনকার তরুণদের আছে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের কয়েকজন প্রতিনিধি।

জয়ন্ত সাহাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2019, 10:49 AM
Updated : 26 March 2019, 10:55 AM

তাদের প্রশ্ন, পঁচাত্তরে স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা বঙ্গবঙ্গু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর যে উল্টোস্রোতে এদেশকে নেওয়া হয়েছিল, সেই বিকৃত ইতিহাস থেকে কি বেরিয়ে আসতে পেরেছে তরুণ প্রজন্ম? 

একাত্তরের সঠিক ইতিহাস তরুণ প্রজন্ম না জানলে মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন বৃথা যাবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষ। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

স্বাধীনতা দিবসে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির সূর্য সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে এসে এই অভিমত দেন একাত্তরের রণাঙ্গনের যোদ্ধা, অধ্যাপক, রাজনীতিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা।

স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মুক্তিযোদ্ধা ৯ নম্বর সেক্টরের গেরিলা যোদ্ধা এম এ মান্নান শিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আজকের তরুণরাও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে অনেক নতুন তথ্য বের করে নিচ্ছে নিজেরাই।

“কিন্তু পঁচাত্তরের পর তাদের যে ভুল ইতিহাস শেখানো হয়েছে, ইতিহাসের অনেক উপাত্ত যখন মুছে ফেলা হয়েছে, তখন কতটা সঠিক ইতিহাস তারা শিখছে? এ প্রশ্ন কিন্তু থেকে যাবে।”

স্বাধীনতা দিবসে মঙ্গলবার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনের মিছিলে শারীরিক প্রতিবন্ধীরা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

সাভারের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান বলেন, “স্বাধীনতা যুদ্ধের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী- সেটাই তো তরুণদের এখনও ঠিকমতো শেখানোই হয়নি। শুধু একটা বিজয় এসেছে ভাবলেই হবে না। এই মুক্তিযুদ্ধের আরও অনেক অর্থ আছে।

স্বাধীনতা দিবসে মঙ্গলবার শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসে শিক্ষার্থীরাও। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

“অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক যে মুক্তিগুলোর জন্য লড়াই করা হয়েছে, ৪৮ বছর পরে এসে তরুণরা কি তার হিসাব নিয়েছে কখনও?”

১৯৬৫ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন ক্যাপ্টেন মোশাররফ হোসেন।

তিনি তরুণদের ইতিহাস পাঠে গলদ খুঁজে পান পাঠ্যসূচিতেই।

স্বাধীনতা দিবসে মঙ্গলবার একাত্তরের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে নামে মানুষের ঢল। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

ক্ষোভের সুরে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “আগামীর বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে এখনকার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাই সঠিক না। বাচ্চারা কি পড়ে তারা সেটা নিজেরাই জানে না।

“তারা যদি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে না জানে, তাহলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন ব্যর্থ হয়ে যাবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, “পাকিস্তানের অপশক্তি এখন নানা অপতথ্য ছড়িয়ে, অপপ্রচার চালিয়ে তরুণদের বিভ্রান্ত করতে চায়। এভাবে তারা বড় বড় অর্জনকে ম্লান করে দিতে চায়।”

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, পাকিস্তানের সেই পরাজিত ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি’ তরুণ সমাজের মধ্যে বিস্তার লাভ করলে বাংলাদেশকে আর সঠিক পথে রাখা যাবে না।

বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষ। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ বলেন, “লাখো শহীদ যে চেতনা ও আদর্শকে বুকে নিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছে, তরুণ প্রজন্মের উচিৎ হবে সেই আদর্শকে বুকে লালন করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠা।”

তরুণদের মধ্যে যারা নেতিবাচক ধারণা ছড়াতে চান তারা কখনও টিকে থাকতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“যারা নেতিবাচক অবস্থান নিয়ে আছেন, তারা নিজেরা ধ্বংস হয়ে যাবেন। ষড়যন্ত্রের পথ ধরে বেশি দিন টিকে থাকাও সম্ভব নয়,” বলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক।

বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষ। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

দেশের প্রগতিতে তরুণ প্রজন্মের ওপর আস্থা রাখতে চান উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম এ মান্নান।

তিনি বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এ দেশে যতই দ্বিধাবিভক্তির চেষ্টা করুক না কেন, আমাদের আশা তারাই সংঘবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে একটি রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।”