অনগ্রসরদের চাকরির অধিকার প্রতিষ্ঠায় নীতিমালা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, অনগ্রসর জাতির মানুষ যেন চাকরির অধিকার পায় সেজন্য সরকার একটি নীতিমালা করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2018, 07:25 AM
Updated : 3 Dec 2018, 08:23 AM

২৭তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস এবং ২০তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষ্যে সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে বারবার কিছুদিন পরপরই আন্দোলন হয়। সেজন্য আমরা কোটাপদ্ধতি বাতিল করে দিয়েছি এটা ঠিক তবে একটা নীতিমালা আমরা তৈরি করছি।

“যেখানে (নীতিমালায়) অবশ্যই প্রতিবন্ধী, নৃ-গোষ্ঠী বা অনগ্রসর জাতি, তাদের সকলের যেন একটা অধিকার থাকে। তারা যেন যথাযথভাবে চাকরি পায় এবং চাকরিতে যেন তাদের একটা অধিকার দেওয়া হয়, জায়গা করে দেওয়া হয় সেই ব্যবস্থাটা অবশ্যই করা হবে। সেই নীতিমালাটা আমরা প্রস্তুত করে দিচ্ছি।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে নেওয়া সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ প্রণয়ন তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি, নিউরো ডেভেলাপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন ২০১৩, আটিজমে আক্রান্তদের জন্য আইন পাস করেছি। তাছাড়া সর্বক্ষেত্রে আমাদের নির্দেশ হচ্ছে যত স্থাপনা হবে প্রতিটি জায়গায় প্রতিবন্ধীদের যাতায়াতের যেন সুযোগ থাকে। যত প্ল্যান করা হবে সেখানে প্রতিবন্ধীদের জন্য যেন বিশেষ ব্যবস্থা থাকে।

“তাছাড়া আমরা প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা দিচ্ছি। প্রায় ১৬ লাখের উপরে প্রতিবন্ধী আমাদের দেশে আছে। এরই মধ্যে আমরা প্রতিবন্ধীদের জন্য যেমন ভাতা দিচ্ছি পাশাপাশি যারা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী তাদেরকেও বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে ৭০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৭৫০ টাকা এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৮৫০ টাকা আর উচ্চতর স্তরে যে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছেন তাদের ১২০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। প্রায় ২ কোটি ৪ লাখ শিক্ষার্থীকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে।”

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের বিনামূল্যে ব্রেইল বই দেওয়া হচ্ছে। জুলাই মাস থেকে প্রতিবন্ধীদের ভাতা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে দেওয়া হবে। যারা প্রতিবন্ধীদের দেখাশোনা করেন, তাদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে জনগনকে সচেতন করা হবে বলেও জানান তিনি।    

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে তখনই অবহেলিত মানুষের ভাগ্য কিভাবে পরিবর্তন করা যায় সেটা নিয়ে ভেবেছে। তাদের মধ্যে যে মেধা রয়েছে সেটা কিভাবে কাজে লাগানো যায়। সমাজের অন্যান্য মানুষের মতো প্রতিবন্ধীদের অধিকারও যেন প্রতিষ্ঠিত হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি এবং কাজ করে যাচ্ছি।

“এক সময় প্রতিবন্ধী যারা, তাদের অবহেলা করা হত, মানুষ দূর দূর করত, মানুষ হিসেবে গণ্য করা হত না। তাদেরকে যেন আমরা অবহেলা না করি, তাদেরকে যেন সমাজেরই একটা অংশ হিসেবে আমরা পাই। মানুষ হিসেবে তাদের যেই অধিকার সেটা যেন তাদের দিতে পারি। তাদের ভেতরেও যে শক্তি আছে, মেধা আছে সেটা যেন কাজে লাগাতে পারি।”

অনুষ্ঠানে এক প্রতিবন্ধী নারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের তৈরি করা একটা ছোট নৌকা উপহার দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “এখানে আমাদের এক বোন। তার দুটো হাত নেই। পা দিয়ে সে একটা নৌকা তৈরি করে আমাকে উপহার দিয়ে গেল। কাজেই হাত না থাকার পরও তার যেই মেধা শক্তি, পা দিয়ে এই জিনিসটা তৈরি করেছে। তাদের তো অবহেলা করার সুযোগ নেই।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. নুরুজ্জামান, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জিল্লার রহমান, বিভিন্ন প্রতিবন্ধী সংগঠনের সদস্য, কূটনৈতিক মিশনের সদস্যসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।