পদত্যাগ করেছেন টেকনোক্র্যাট ৪ মন্ত্রী

একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন সরকারের টেকনোক্র্যাট চারজন মন্ত্রী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Nov 2018, 02:58 PM
Updated : 6 Nov 2018, 03:52 PM

তারা হলেন ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈ‌দে‌শিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএস‌সি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযু‌ক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তারা পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে চার মন্ত্রীর দপ্তরই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছে।

জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনও পদত্যাগপত্রগুলো হাতে পাইনি, তবে প্রক্রিয়াধীন আছে।”

নিয়ম অনুযায়ী, চার মন্ত্রীর পদত্যাগপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর তা যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে।

রাষ্ট্রপতি তাদের পদত্যাগের ফাইলে স্বাক্ষর করলে এদের অব্যাহতি দিয়ে আদেশ জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

সকালে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা- ছবি: পিআইডি

এর আগে সকালে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আজকে মন্ত্রিসভার বৈঠকের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি শেষে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সভার টেকনোক্র্যাট মিনিস্টারদের পদত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছেন, অন্যরা স্ব-পদে বহাল থাকবেন।”

শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় এই চারজনই টেকনোক্র্যাট ছিলেন; অর্থাৎ তারা নির্বাচিত সংসদ সদস্য নন। বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে, মন্ত্রিসভার মোট সদস্যের এক-দশমাংশ অনির্বাচিত হতে পারেন।

চলতি বছর জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভায় সর্বশেষ রদবদলের পর ৩০ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দুজন উপমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাদের মধ্যে কেবল পদত্যাগী চারজনই ছিলেন টেকনোক্র্যাট।

এদের মধ্যে চট্টগ্রামের নুরুল ইসলাম বিএসসি ও ময়মনসিংহের মতিউর রহমান আগে সংসদ সদস্য ছিলেন। জোটের স্বার্থে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে দুজনকেই নিজ নিজ আসন ছেড়ে দিতে হয়েছিল।

প্রকৌশলী ইয়াফেস ওসমান শুরু থেকে মন্ত্রিসভায় থাকলেও তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তাফা জব্বার চলতি বছরের জানুয়ারিতে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন।

মন্ত্রিসভার সদস্যরা ছাড়াও মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের দায়িত্বে আছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এছাড়া মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে আছেন আরও পাঁচজন।

আগামী বৃহস্পতিবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর বর্তমান সরকার শুধু ‘রুটিন’ কাজগুলো করবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করবেন।

বাঁ থেকে মতিউর রহমান, নুরুল ইসলাম বিএসসি, ইয়াফেস ওসমান ও মোস্তাফা জব্বার

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মতবিভেদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে চূড়ান্ত সংলাপে বসার আগের দিনই টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগ করতে বললেন শেখ হাসিনা। সেই নির্দেশ অনুসারে পদত্যাগপত্র জমা দিলেন চারজন।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রী মহোদয় (নুরুল ইসলাম বিএসসি) পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।”

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা বিবেকান্দ রায়ও তার মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেন।

টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযু‌ক্তি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শেফায়েত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সন্ধ্যায় পরে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে স্যার (মোস্তফা জব্বার) পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।”

ধর্মমন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) মো. আনোয়ার হোসাইন জানান, মতিউর রহমান সন্ধ্যায় পদত্যাগপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দিয়েছেন।

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা এখন সংবিধানে নেই। বর্তমান ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়। ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না, তবে তিন মাসের ক্ষণ গণনা শুরু হলে সংসদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অধীনে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেন; যার নাম দেওয়া হয় ‘সর্বদলীয় সরকার’।

এবার নির্বাচনের সময় মন্ত্রিসভার আকারে বড় কোনো পরিবর্তন না আনার ইঙ্গিত গত মাসে দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু তফসিলের আগে হঠাৎ করেই তিনি বিরোধী দল ও জোটগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে সম্মত হন।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফায় সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের দাবি রয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধানের বাইরে গিয়ে তারা কিছু করতে পারবে না।