সংসদ নির্বাচন: মাঠ কর্মকর্তাদের নিয়ে বসছে ইসি

একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2018, 04:28 AM
Updated : 16 Oct 2018, 11:28 AM

আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের এ বৈঠকে ডাকা হয়েছে বলে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান জানিয়েছেন।

৩০ অক্টোবর থেকে সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হচ্ছে। এরপর যে কোনো সময়ে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানে।

মোখলেসুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মঙ্গলবার ইসির মাঠ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। ইসি সচিবের সভাপতিত্বে এ সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রধান অতিথি ও চার নির্বাচন কমিশনার বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন।

“ভোটের জন্য মাঠ পর্যায়ের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি কোন পর্যায়ে রয়েছে; কী কী করতে হবে। সার্বিক বিষয়ে মাঠ কর্মকর্তাদের কথা শুনব আমরা। দ্রুততম সময়ে পরবর্তী করণীয় ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে এ সভায়।”

ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান স্বাক্ষরিত সভার নোটিসে বলা হয়েছে, ভোটার তালিকার সিডি যাচাই ও মুদ্রণ; ভোটকেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ ও ক্ষেত্রমত প্রতিষ্ঠানের বিশেষ সংস্কার; ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও প্রশিক্ষণের আয়োজন; নির্বাচনী সামগ্রী সংগ্রহ, বিতরণ ও বাজেট প্রণয়ন এবং অন্যান্য বিষয় রয়েছে সভার আলোচ্যসূচিতে।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, ভোটপ্রস্তুতির ৮০ শতাংশের বেশি কাজ ইতোমধ্যে গুছিয়ে আনা হয়েছে। ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের  আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা ও সম্ভাব্য ৪০ হাজারেরও বেশি ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যথাসময়ে মুদ্রণ ও কেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ করা হবে।

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা প্রয়োজন হবে সাত থেকে সাড়ে সাত লাখ। তফসিল ঘোষণার পরপরই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল তৈরির বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হবে।

ভোটের অন্তত ২৫দিন আগে ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশ হবে। তারপর প্যানেল থেকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।

সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনে ৯ কোটি ১৯ লাখের বেশি ভোটারের জন্য কেন্দ্র ছিল ৩৭ হাজার ৭০৭টি; ভোটকক্ষ ছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮টি। সে সময় ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৫৭৭ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। সব মিলিয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ছিলেন ২ লাখ ৯১ হাজার ৮৪৭ জন।

সংসদ নির্বাচনে বরাবরই বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এবার কাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে- সে সিদ্ধান্ত কমিশন সভায় নেওয়া হবে।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ৪০ হাজারের বেশি ভোট কেন্দ্র লাগবে। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে প্রিজাইডিং অফিসার, কেন্দ্র প্রতি দুই জন করে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং প্রতি ভোট কক্ষে দুই জন করে পোলিং অফিসার থাকবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটার অনুপাতে দুই বা ততোধিক ভোটকক্ষ থাকে। তাতে ৮-১০ জন পোলিং অফিসার লাগবে কেন্দ্রপ্রতি।

সব মিলিয়ে এবার সাড়ে সাত লাখের মত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ( ১০ শতাংশ বেশি কর্মকর্তাসহ) প্রয়োজন হতে পারে বলে জানান ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, সরকারি-আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রথম শ্রেণি/সমমর্যাদার, কলেজ, মাদ্রাসা, উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সিনিয়র শিক্ষক বা সমমর্যাদার এবং প্রয়োজনে ব্যাংক-বীমার সমমর্যাদার কর্মকর্তারা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ পেতে পারেন।

এসব প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা বা সমমর্যাদার কর্মকর্তারা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং সরকারি বা রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা পোলিং অফিসার হিসেবে থাকবেন।

ভোট গ্রহণের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। সেক্ষেত্রে কোনো প্রার্থীর অধীন বা পক্ষে কর্মরত আছেন বা ছিলেন- এমন কোনো ব্যক্তিকে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বা পোলিং অফিসার নিয়োগ করা যাবে না।

দেশের অধিকাংশ সরকারি, সরকারি অনুদাপ্রাপ্ত এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হবে।

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেলে প্রয়োজনের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি কর্মকর্তা অন্তর্ভূক্ত করা হবে। কোনো কর্মকর্তাকে নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তাকে বাদ দিয়ে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত জনবল প্রস্তুত রাখা হবে প্যানেলে।

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা নির্বাচনী অনিয়ম করলে, কোন কর্মকর্তা ভোটের গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যর্থ হলে, কোনো ব্যক্তিকে কারও পক্ষে ভোট দিতে প্ররোচিত, নিবৃত্ত, প্রভাবিত বা নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করলে বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে নির্বাচনী আইনে।