তিনি বলছেন, তারেকের মৃত্যুদণ্ড হলে তাকে দেশে ফেরত আনা হয়ত আটকে যেত, যে কারণে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না।
একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায়ে বুধবার আদালত খালেদা জিয়ার ছেলে তারেককে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে। মৃত্যুদণ্ড হয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের।
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় যারা আহত হন, তারা রায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেকের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন।
গ্রেনেড হামলার হোতা হিসেবে তারেক রহমানের সর্বোচ্চ সাজা না হওয়ায় আওয়ামী লীগ পুরোপুরি সন্তুষ্টও নয় বলে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
তবে এই রায়কে ‘সঠিক ও ভালো’ বলছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের অন্যতম নেতা আমীর।
“সেদিক থেকে সরকার অ্যাম্বাসি, হাই কমিশন দিয়ে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেবেন বলে আমি আশা করি। তারেক রহমানকে সেখান থেকে নিয়ে এসে তার সাজা কার্যকর করা হবে।”
সপরিবারে যুক্তরাজ্যে থাকা তারেকের বিরুদ্ধে এটাই প্রথম রায় নয়; এর আগে দুটি দুর্নীতির মামলায় তার ১০ ও ৭ বছর কারাদণ্ডের রায় হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যামামলায় দণ্ডিত অনেকে বিভিন্ন দেশে অবস্থান করলেও তাদের ফেরত আনা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুদণ্ডের সাজাকে কারণ দেখানো হচ্ছে। কারণ ওই দেশগুলো মৃত্যুদণ্ডবিরোধী।
তা তুলে ধরে প্রবীণ আইনজীবী আমীর বলেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যার আসামিদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যে মৃত্যুদণ্ডের অজুহাতটা দেওয়া হচ্ছে, এখানে সে অজুহাতের সুযোগ নেই।
“এই রায়ে (একুশে আগস্ট মামলা) সুযোগ রাখা হয়েছে যাবজ্জীবন দিয়ে। কারণ তারেক রহমানের তো ফাঁসি হওয়ারই কথা। যাবজ্জীবন দেওয়াটা ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমি মনে করি।”
তারেককে লন্ডন থেকে ফেরাতে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা দরকার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চয়ই সেদিকে মনোযোগী হবে, যাতে দ্রুত এ সাজা বাস্তবায়ন হয়।”
“সে রিপোর্টে আমরা বলেছিলাম, “সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল এবং এর মূল উদ্দেশ্য ছিল জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। এর মূল টার্গেটেই ছিলেন আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্যে এই ষড়যন্ত্রটি করা হয়েছিল।”
একুশে আগস্টের এই হামলায় শেখ হাসিনা বেঁচে গেলেও প্রাণ হারিয়েছিলেন আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতা-কর্মী, আহত হয়েছিলেন কয়েকশ।
আমীর বলেন, “পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের নজির কিন্তু খুব কম। এটা আমার কাছে মনে হয়, জালিয়ানওয়ালাবাগে যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল তার চেয়েও নিকৃষ্ট। জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডটি ষড়যন্ত্র করে করা হয়নি। কিন্তু এখানে (২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা) একটি বিরাট ষড়যন্ত্র আয়োজন করা হয়েছে রাজনৈতিকভাবে একটি দলকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য, জাতীয় নেতৃত্বকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য।”
তারেকের দল বিএনপি এই রায়কে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সরকারের ফরমায়েশে আদালতের এই রায় হয়েছে।
আমীর বলেন, “রায় প্রত্যাখ্যান করাটা একটা অপসংস্কৃতি। একটি রাজনৈতিক দল বিলং করলেই আদালতের রায় মানি না, মানব না, এটা রাজনৈতিক সংস্কৃতির খারাপ দিক। আদালতের রায় আইনগতভাবে আদালতেই মোকাবেলা করা উচিৎ। কিন্তু মানি না, মানব না এটা এক ধরনের এনার্কিস্ট দৃষ্টিভঙ্গী।”