বুধবার বিচারিক আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “এই রায়ে অখুশি নই। কিন্তু পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই।
“কারণ এই রায়ে প্ল্যানার এবং মাস্টারমাইন্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি দরকার ছিল, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট।”
দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে তাৎক্ষণিকভাবে এই প্রতিক্রিয়া জানানোর পর বিকালে দলীয় অবস্থান তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
কাদের বলেন, “আমরা তারেক রহমানের ফাঁসি দাবি করছি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফাঁসি দাবি করছি। যে বর্বর তাণ্ডব করেছে ওই দিন, মুফতি হান্নানের জবানবন্দিতে তা এসেছে।”
সেদিন অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়।
শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতেই এই হামলা হয়েছিল এবং তাতে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোটের শীর্ষ নেতাদের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল বলে এ মামলার রায়ে উঠে এসেছে।
ওই সরকার আমলে এই হামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে জজ মিয়া নামে নিরাপরাধ এক ব্যক্তিকে হামলার হোতা হিসেবে দেখানোর চেষ্টাও হয়েছিল।
রায়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, তৎকালীন উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। কারাদণ্ডের রায় হয়েছে সাবেক তিন পুলিশ প্রধান, ডিজিএফআইর দুই কর্মকর্তারও।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও এই হামলার দায় এড়াতে পারেন না বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের।
তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পূর্ণমন্ত্রী না থাকায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান জানতেন, আর তিনি জানতেন না? এটা হয় না। তাই তিনিও এই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না।”
খালেদার ছেলে তারেকের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে কাদের বলেন, “আমরা আদালতকে ধন্যবাদ জানাই, অন্তত একটা বিচার তো হয়েছে। কিন্তু আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি।
“২১ অগাস্টের মাস্টারমাইন্ড, প্ল্যানার, বিকল্প পাওয়ার হাউজ তারেক রহমান সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে পারতেন। তিনি যা করেছেন, তার প্রাপ্য শাস্তিটুকু পেতে পারতেন।”
কাদের বলেন, “সে সময় বনানীর হাওয়া ভবন থেকেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হত। তখন বেগম জিয়ার সরকার ক্ষমতায়, হাওয়া ভবন বিকল্প পাওয়ার সেন্টার ছিল। মুফতি হান্নান নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়ে গেছে যে, অপারেশন চালানোর পূর্ব মুহূর্তে তারেক রহমানের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল।”
তিনি বলেন, “ওই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রধান টার্গেট ছিল তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে প্রধান টার্গেট করে যে হামলা এবং যে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী, মাস্টারমাইন্ড কে, এটা দেশের জনগণ ভালো করে জানে, এটা এখন আর গোপন কিছু নয়।”
সেদিনের হামলায় আহতরাও রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে তারেক রহমানের ফাঁসির দাবি তুলেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও একই মত জানিয়েছেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তারেক, খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী ও তৎকালীন সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের ফাঁসি চেয়ে আপিলের ইঙ্গিত দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ্ তিনজনই বিদেশে পালিয়ে আছেন।
আপিল করা হবে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী কাদের বলেন, “আমরা সরকারের কাছে আপিলের আবেদন জানাব।”
বিএনপি এই রায় প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তাদের দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় সরকারের ‘ফরমায়েশে’ রায় দিয়েছেন বিচারক।
কাদের বলেন, “আমরা জাস্টিস চেয়েছি, আমরা বিচারকে প্রভাবিত করিনি।”
ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন, এনামুল হক শামীম, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ উপস্থিত ছিলেন।