পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হওয়ার মতো বিষয়গুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থেকে বাদ না দিলে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতারা।
Published : 30 Sep 2018, 11:27 PM
সচিবালয়ে রোববার বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশ এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নেতারা তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকের পর তাদের সিদ্ধান্ত জানান।
বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকরা যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতার স্বীকার না হয়, ওই জায়গাটুকুতে আমরা নিশ্চয়তা চাচ্ছি, এর বাইরে আমাদের অন্য কোনো ডিমান্ড নেই।
“আমরা বলেছি যদি ওই জায়গাটি নিশ্চিত না হয়, তবে কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলন করব, অবস্থান গ্রহণ করব।”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোন কোন ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন- সে প্রশ্নে জালাল বলেন, “অনেক বড় আইন, আমরা সুনির্দিষ্টভাবে কোনো ধারা-উপধারা ব্যাখ্যা করে নয়, যারা আইনটি প্রণয়ন করেছেন, তাদেরকেই বলেছি, আপনারা খুঁজে খুঁজে বের করুন, আমাদের সেন্টিমেন্টটা ওই।
“আমাদের সেন্টিমেন্টের বিপক্ষে, অবস্থানের বিপক্ষে আপনারা যা কিছু লিখেছেন সংশোধন করুন।”
ডিআরইউ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, “সব সাংবাদিকের বক্তব্য একই, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কিছু কিছু ধারা আছে যেগুলো সত্যিকার অর্থে গণমাধ্যম এবং গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য আতঙ্ক ও উদ্বেগের।
“কোথায় কোথায় আপত্তি, সেগুলো কীভাবে দূর করা যায় সে সুপারিশ দিয়েছি। আমরা সার্বিকভাবে এই আইনের বিরোধীতা করছি না, আমরা চাই এই আইন দ্বারা যাতে গণমাধ্যম এবং সংবাদকর্মীরা কোনোভাবেই প্রতিবন্ধকতার স্বীকার না হন।”
সাইফুল বলেন, “আমরা বলেছি, সাংবাদিকদের সুরক্ষা দিতে হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এলে সেটি তদন্তের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের একটি বিধান রয়েছে।
“এই আইনে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যদি কোনো ডিজিটাল অপরাধ উত্থাপিত হয় সেই অভিযোগ ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিচারের আগে যেন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে… প্রেস কাউন্সিল বা সম্প্রচার কাউন্সিল হতে পারে তাদের অনুমোদনের পরে যাতে তদন্ত শুরু হয়।”
মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে আশ্বস্ত কি না- সেই প্রশ্নে ডিআরইউ সভাপতি বলেন, “আমরা দেখতে চাই। তথ্যমন্ত্রীর তিনজন সহকর্মী (বৈঠকে) ছিলেন, বলেছেন বিষয়টি মন্ত্রিসভায় তুলবেন। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েও যদি না হয় আমরা আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কর্মসূচি দেব।”
তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, “বৈঠকে আইন পর্যালোচনা হয়েছে, সাংবাদিক নেতাদের পরামর্শ ও মতামত নিতে আমরাই তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।
“কিছু কিছু ধারা নিয়ে তারা উৎকণ্ঠা ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। … যেহেতু আইনটি পাস হয়ে গেছে পুরো বিষয়টি মন্ত্রিসভায় নিয়ে যাব, মন্ত্রিসভার দিকনির্দেশনার ভিত্তিতে পরবর্তী আলোচনার সূত্রপাত করব, আলোচনাটা অব্যাহত আছে।”
মন্ত্রী আবারও বলেন, “আমরা এখনও মনে করি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যেটা করা হয়েছে ডিজিটাল যন্ত্রপাতি দিয়ে ডিজিটাল অপরাধ যারা করছে, তাদের মোকাবেলা করার জন্য, গণমাধ্যম বা গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে আইনটি তৈরি করা হয়নি।
“তারপরও এ আইনে যদি গণমাধ্যমের কর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সে বিষয়টাও দেখা জরুরি, কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সুরক্ষায় বিশ্বাস করেন। একই সঙ্গে ডিজিটাল অপরাধীদের মোকাবেলা করে নিরাপদ ডিজিটাল সমাজ তৈরি করতে উনি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।”
বিএফইউজের সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ, ডিইউজে সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী ছাড়াও তিনটি সংগঠনের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যরা বৈঠকে অংশ নেন।
এর আগে দুপুরে দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকরা আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তথ্যমন্ত্রী, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন।