শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে ৩৭ শিক্ষকের বিবৃতি  

কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের দাবিতে আন্দোলন থেকে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে নয়টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ জন শিক্ষক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2018, 05:24 PM
Updated : 16 August 2018, 05:24 PM

কেরবানির ঈদের আগে ‘আইনের সঠিক প্রয়োগের’ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জামিনে মুক্তি দিতে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এই শিক্ষকরা। তারা আশা করছেন, সরকার এক ‘অমানবিক নিপীড়নের’ সমাপ্তি টানবে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হওয়ার পর সম্প্রতি নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে সহিংসতা ও সোশাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কয়েকজন উপাচার্য আহ্বান জানালেও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তা প্রত্যাখ্যান করেন।

আন্দোলনের মধ্যে সোশাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়ে যারা ভিন্ন উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাইছিল, তাদের বিচারের কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার এক আলোচনা সভায় বলেন।

এদিনই ৩৭ শিক্ষকের বিবৃতি আসে; যাতে বলা হয়, গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের ‘রাষ্ট্রীয় রোষানলের শিকার’, এই শিক্ষার্থীরা এখন চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, “যারা সেদিন অত্যাচার করল, ভয়ঙ্কর নিপীড়ন করল, তাদের বিস্তারিত পরিচয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”

শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীদের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে রাষ্ট্র ‘নির্লজ্জ ও পক্ষপাতমূলক’ আচরণ করছে বলেও অভিযোগ করেন এই শিক্ষকরা।

গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে কর্মসূচিতে সহপাঠিরা (ফাইল ছবি)

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মধ্যে গ্রেপ্তার ১১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে সাতজনের এখনও কারাগারে থাকার তথ্য তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, এদের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে ভাংচুর ও আইসিটি আইন লঙ্ঘনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাতে এই শিক্ষার্থীরা কীভাবে সংশ্লিষ্ট তা ‘অস্পষ্ট’ ঠেকছে।

“যে প্রক্রিয়াতে তাদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, তা আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের মতে সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন।”

এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতা এবং সোশাল মিডিয়ায় উস্কানি দেওয়ার ঘটনায় ঢাকার বিভিন্ন থানায় মোট ৫১টি মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯৭ জনকে।

শিক্ষকদের বিবৃতিতে বলা হয়, “গ্রেপ্তারকৃত ছাত্ররা কীভাবে এই গুরুতর অপরাধগুলোর সাথে জড়িত তার প্রমাণ এখনও পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী গণমাধ্যমকে সরবরাহ করেনি।  কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ও গ্রেপ্তারকৃতদের ছাত্রদের বিরুদ্ধেও কোনো প্রমাণ সাধারণ জনগণের কাছে প্রকাশিত হয়নি।”

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হলেন- অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, সহযোগী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক খান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আশিক মোহাম্মদ শিমুল, সহকারী অধ্যাপক সেলিম হোসেন,ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাহমিনা খানম এবং ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক কাজী মারুফ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হলেন- অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক আইনুন নাহার, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা এবং অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল সুমন, সহযোগী অধ্যাপক নাসরীন খোন্দকার, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক স্বাধীন সেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হলেন- গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সায়মা আলম, সহকারী অধ্যাপক আর রাজী, সহকারী অধ্যাপক সুবর্ণা মজুমদার,  সহকারী অধ্যাপক সুদীপ্ত শর্মা, নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক সাদাফ নূর ই ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক খাদিজা মিতু, ইংরেজির সহকারী অধ্যাপক গোলাম হোসেন হাবীব, সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো.মাইদুল ইসলাম।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হলেন- শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক গৌতম রায়, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন, সহযোগী অধ্যাপক আ-আল মামুন, সহকারী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ।

বুয়েটের অধ্যাপক হাসিবুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসির আহমেদ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়াও বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন।