শিক্ষার্থীদের আন্দোলন: ৫১ মামলায় ৯৭ জন গ্রেপ্তার

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতা এবং সোশাল মিডিয়ায় উসকানি দেওয়ার ঘটনায় ঢাকার বিভিন্ন থানায় মোট ৫১টি মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯৭ জনকে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 August 2018, 03:57 PM
Updated : 15 August 2018, 04:12 PM

ডিএমপি নিউজ বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দিয়েছে। যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদর রহমান মামলা ও গ্রেপ্তারের এই সংখ্যা নিশ্চিত করেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই মামলাগুলোতে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ২৯ জুলাই বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে অচল হয়ে পড়ে ঢাকার সড়ক।

সপ্তাহব্যাপী এই আন্দোলনের শেষ দিকে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা হয় কয়েকটি স্থানে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও নামে সড়কে; তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাতও বাঁধে। তখন বেশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিতে ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারের অভিযোগেও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম ও অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের মুক্তি দাবিতে কর্মসূচি

ডিএমপি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫১টি মামলার মধ্যে আটটি তথ্য প্রযুক্তি আইনে করা। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ২৯ জন; তার মধ্যে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার এই আসামিদের মধ্যে শহিদুল ও নওশাবা ছাড়াও রয়েছেন বুয়েটের ছাত্র  দাইয়ান নাফিস প্রধান।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নেতা ইডেন কলেজের ছাত্রী শামসুন নাহার লুমা, ইউল্যাবের ছাত্র নাজমুস সাকিবকেও গ্রেপ্তার করা হয় তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায়।

এই আটটি মামলার মধ্যে চারটি মামলা ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ, একটি ডিবি পুলিশ এবং একটি থানা পুলিশ তদন্ত করছে। বাকি দুটির বিষয়ে ডিএমপি নিউজে তথ্য নেই।

দণ্ডবিধি ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মোট ৪৩ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮১ জনকে। এর মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ২২ শিক্ষার্থীকে, যারা এখন কারাগারে রয়েছেন।

গ্রেপ্তার সহপাঠিদের মুক্তি দাবিতে শিক্ষার্থীরা

মামলার পরিসংখ্যানে ডিএমপি নিউজ জানায়, রমনা বিভাগে মোট ১৪টি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় ৩১ জনকে। এর মধ্যে ১৩টি মামলার তদন্ত করছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ এবং ১টির তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ।

লালবাগ বিভাগে একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলাটিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে একজনকে।

ওয়ারি বিভাগে মোট মামলা হয়েছে দুটি; গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক জনকে।

মতিঝিল বিভাগে ছয়টি মামলা করা হয়েছে; ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তেজগাঁও বিভাগে ছয়জনকে আসামি করে দুটি মামলা করা হয়েছে। এরমধ্যে ২ জন এজাহারনামীয়সহ সন্দেহভাজন ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গুলশান বিভাগে অজ্ঞাতনামা ২০০০/২৪৫০ জনকে আসামি করে সাতটি মামলা এবং ৩১ জনকে আসামি করে দুটি মামলা হয়েছে। এই নয়টি মামলায় মোট গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৬ জনকে।

গুলশানের বসুন্ধরা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ (ফাইল ছবি)

মিরপুর বিভাগের মিরপুর মডেল থানায় বিইউবিটি ইউনিভার্সিটি ও কমার্স কলেজসহ অন্যান্য কলেজের অজ্ঞাতনামা ৫০০/৬০০ জন ছাত্র-শিক্ষককে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনকে আসামি করে কাফরুল থানায় একটি মামলা হয়েছে।

এছাড়া ৯৬ জনকে আসামি করে আরও তিনটি মামলা হয়েছে মিরপুর বিভাগে।

উত্তরা বিভাগে অজ্ঞাতনামা ১০০/১৫০ জনকে আসামি করে তিনটি মামলা এবং ১১৩ জনসহ অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে ১টি মামলাসহ মোট ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এসব মামলায় গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানিয়ে  আসছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। আলোকচিত্রী শহিদুলের মুক্তি দাবিতে দেশ ও বিদেশের অধিকারকর্মীরাও দাবি তুলেছেন।