ইউএনডিপি বাংলাদেশ এবং সেন্টার ফর ম্যান অ্যান্ড ম্যাসকুলিনিটি স্টাডিজের (সিএমএসএস) যৌথ উদ্যোগে ‘ব্রেভম্যান ক্যাম্পেইন’ এর অংশ হিসেবে স্কুল পর্যায়ে শিশু-কিশোরদের পর্নগ্রাফির প্রতি আসক্তি এবং এ থেকে উত্তরনের উপায় বের করতে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক সংলাপে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন সিএমএমএস) এর চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. শাইখ ইমতিয়াজ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে এ বছরের মে পর্যন্ত সময়ে গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
রংপুর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর ও কক্সবাজারের স্কুলগামী ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সী ৯০০ ছেলের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে গবেষণার ফলাফল তির করা হয়।
সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ বলেন, “১৮ বছরের নীচে স্কুলগামী ছেলেদের মধ্যে শতকরা ৮৬.৭৫ ভাগ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে এবং শতকরা ৮৪.২২ ভাগ ইন্টারনেটের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করে।”
গবেষণার উপাত্তে দেখা যায়, স্কুলগামী ছেলেদের শতকরা ৬১.৬৫ ভাগ পর্নগ্রাফি দেখে আর ৫০.৭৫ ভাগ ছেলে ইন্টারনেটে পর্নগ্রাফি খোঁজে।
আর পর্নগ্রাফিতে আসক্ত ছাত্রদের শতকরা ৬৩.৪৫ ভাগ প্রথম মোবাইলে পর্নগ্রাফি দেখেছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
এছাড়া স্কুলগামী যেসব কিশোর পর্নগ্রাফি দেখে তাদের শতকরা ৭০.৫৫ ভাগ মেয়েদের শারীরিকভাবে উত্যক্ত করতে চায় বলেও উল্লেখ করেন সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ।
তিনি বলেন, “আমরা সবাই নারীদের পরামর্শ দেই, নারী তুমি সচেতন হও। কিন্তু পুরুষ সন্তানকে আমরা কোনো কাউন্সিলিং করি না। কিন্তু লিঙ্গবৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসতে হলে পুরুষদের কাউন্সিলিং করাতে হবে, পুরুষ সমাজকে সচেতন করতে হবে। পুরুষদের সচেতন করতে হবে নারীর অধিকারের বিষয়ে।”
সমাজে নৈতিকতার অবক্ষয় রোধে নারী-পুরুষকে একসাথে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
ইন্টারনেট এবং সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে তিনি বলেন, “ইন্টারনেটের সুবিধার কারণে আমরা ভালো-মন্দ সবকিছু দেখার সুযোগ পাচ্ছি। কিন্তু গণতন্ত্র, গণমাধ্যম এবং সাইবার জগতের সাথে আমাদের খাপ খাওয়ানোটা রপ্ত করতে হবে।”
ছেলেমেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালের শিক্ষা দেওয়ার ওপরও জোর দেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপান স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, “একটি শিশুর শতকরা ৫০ ভাগ মানসিক গঠন হয় গর্ভাবস্থায়ই। তাই উন্নত শিশু এবং উন্নত জাতি গড়ে তুলতে নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।”
রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ জীনাত হুদা বলেন, “বিদ্যমান পরিস্থিতির পরিবর্তনে সবার আগে প্রয়োজন আমাদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন এবং এটা শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক, ইউএনডিপি বাংলাদেশের হিউম্যান রাইটস প্রোগ্রামের চিফ টেকনিক্যাল অফিসার শর্মিলা রসুল প্রমুখ।