গুলশান হামলায় হাসনাত করিমের সম্পৃক্ততা মেলেনি: পুলিশ

গুলশান হামলার মামলায় দুই বছর ধরে বন্দি থাকলেও হাসনাত রেজাউল করিমকে বাদ রেখেই দেওয়া হয়েছে অভিযোগপত্র।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2018, 11:32 AM
Updated : 23 July 2018, 12:07 PM

আটজনকে আসামি করে সোমবার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের পর পুলিশ জানিয়েছে, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক এই শিক্ষকের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ তারা পাননি।

হামলার দিন সপরিবারে গুলশানের ওই ক্যাফেতে ছিলেন ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী হাসনাত করিম। তাদের উদ্ধারের পর সন্দেহ সৃষ্টি হলে হাসনাত করিমকে পরের মাসেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কারাগারে।

বিশ্বজুড়ে আলোচিত ওই হামলার ঘটনায় পুলিশ সন্ত্রাসবিরোধী আইনে যে মামলা করেছিল, দুই বছর পর তার তদন্ত শেষ করল পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

জীবিত আটজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেওয়ার পর এই ইউনিটের কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এই হামলায় জড়িত হিসেবে ২১ জনকে চিহ্নিত করেছেন তারা। তার মধ্যে পাঁচজন হামলার দিনই নিহত হয়েছিলেন, আরও আটজন মারা যায় পরে বিভিন্ন অভিযানে।

হাসনাত করিমের নাম অভিযোগপত্রে না থাকার বিষয়ে মনিরুল বলেন, “এই ঘটনায় জীবিত উদ্ধারদের মধ্যে কেউই হাসনাত করিমের নাম বলেনি। তদন্তে হামলার কোনো পার্টেই হাসনাত করিমের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তাই চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।”

তদন্তে ২১১ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এর মধ্যে ১৪৯ জন প্রত্যক্ষদর্শী।

২০১৬ সালের ৪ অগাস্ট গ্রেপ্তার হওয়ার পর হাসনাত করিম অনেকবার জামিনের আবেদন করলেও প্রতিবারই তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলে আসছিলেন, অভিযোগপত্রে হাসনাত করিমের নাম আসতে পারে।

ঢাকার বনানীর ব্যবসায়ী প্রকৌশলী রেজাউল করিমের ছেলে হাসনাত করিম মেয়ের জন্মদিন উদযাপনের জন্য ওই বছরের ১ জুলাই সপরিবারে হলি আর্টিজানে গিয়েছিলেন।

হাসনাত করিমের বাবা ও মা; ছেলে বন্দি থাকার মধ্যেই মারা গেছেন রেজাউল করিম

সন্ধ্যার পর সেখানে পাঁচ জঙ্গি হানা দিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। তখন জিম্মি হন হাসনাত করিম, তার স্ত্রী, দুই মেয়েসহ কয়েকজন। কমান্ডো অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের হত্যা করার পর তারা মুক্ত হন।

কমান্ডো অভিযানের পর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে হলি আর্টিজান থেকে বেরিয়ে আসছেন হাসনাত করিম

কিন্তু ওই ক্যাফেতে জিম্মি দশার একটি ভিডিওচিত্র প্রকাশের পর হাসনাতকে নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।

হামলার পরদিন ভোরে ধারণ করা ওই ভিডিওতে হাসনাত করিমকে জঙ্গিদের সঙ্গে আলাপ করতে দেখা গিয়েছিল।

হলি আর্টিজানে কমান্ডো অভিযান শুরুর আগের এক ছবিতে ক্যাফের ছাদে দুই ব্যক্তির সঙ্গে হাসনাত রেজাউল করিমকে দেখা যায়।

হলি আর্টিজানে কমান্ডো অভিযানে যে পাঁচ হামলাকারী নিহত হন, তাদের মধ্যে নিবরাজ ইসলাম নর্থসাউথের শিক্ষার্থী ছিলেন, যেখানে হাসনাত এক সময় পড়াতেন।

জঙ্গি রোহান ইমতিয়াজের সঙ্গে হাসনাত করিম ও অস্ত্র হাতে তাহমিদ (কালো টি-শার্ট পরা); কমান্ডো অভিযানের আগের এই ছবি সোশাল মিডিয়ায় আলোড়ন তোলে

হাসনাতকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের (গোয়েন্দা) তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন বলেছিলেন, “গুলশানের হামলার ঘটনায় হাসনাত করিমের জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই ওই ঘটনায় করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।”

তবে হাসনাতের স্ত্রী জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, জিম্মি অবস্থায় তাদের বিভিন্ন নির্দেশ মেনে কাজ করতে হয়েছিল।

হাসনাতের সঙ্গে উদ্ধার তাহমিদ হাসিব খানকে নিয়েও দেখা দিয়েছিল সন্দেহ; কারণ ভিডিওতে তাকে অস্ত্র হাতে দেখা গিয়েছিল। তবে পরে ‍পুলিশ অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় কানাডায় পড়াশোনারত তাহমিদকে। পরে তিনি মুক্তি পেলেও হাসনাত করিম আটকে আছেন।