সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের চতুর্থ দিনে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের কারণে সৃষ্ট যানজটের কারণে দুর্ভোগ ও ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে রাজধানীবাসী।
Published : 11 Apr 2018, 05:37 PM
বুধবার সকাল ১০টার পর থেকে ঢাকার সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা মহানগরীর বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একারণে বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট সৃষ্টি হয় এবং সেইসঙ্গে গণপরিবহণ সংকটে পড়ে মানুষ।
অবরোধের কারণে রাজধানীর মোট ১৩টি পয়েন্টে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় বলে ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে।
সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই রাজধানীর নর্থ সাউথ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি ও এআইইউবির শিক্ষার্থীরা বসুন্ধরার সামনের গেইটে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে রামপুরা থেকে বাড্ডা-নতুনবাজার হয়ে কুড়িল বিশ্বরোডের দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েন জনসাধারণ; দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থেকে পরিবহন ছেড়ে হেঁটেই গন্তব্যের পথে যেতে দেখা যায় অনেককে।
বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে রাজশাহীগামী বাস ধরবেন আব্দুর রশিদ। সড়ক বন্ধ থাকায় হেঁটেই রওনা হন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি জানতাম না এ অবস্থা। সিএনজি থামিয়ে তাই হেঁটেই যাচ্ছি। রাজশাহী যাওয়া খুবই দরকার। কিন্তু ট্রেন ধরতে পারবো কিনা সেটা বুঝতে পারছি না।”
মোমেনা মুনতাহা নামে এক গৃহিনী তার ছয় মাসের বাচ্চা কোলে হেঁটে যাচ্ছিলেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিজের বাসার উদ্দেশ্যে। তিনি বললেন, “নতুন বাজারে ডাক্তার দেখাই বাবুকে। ভেতরের রাস্তাও ব্লকড...কোনো সিএনজি যেতে চাইছে না। তাই হাঁটছি...কষ্ট হচ্ছে।"
ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিলেও আরেকটি অংশ তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যায়। মঙ্গলবার তারা সারাদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখায়।
বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সংহতি জানিয়ে রাস্তায় নামে। একইভাবে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি রাজধানীজুড়ের বিভিন্ন সড়কে নেমে পড়ে। টানা দুদিন যান চলাচল বিঘ্ন হওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তির সঙ্গে ক্ষতির মুখে পড়েছেন পরিবহনসংশ্লিষ্টরা।
যাত্রাবাড়ী-টঙ্গি রুটে চলাচল করা তুরাগ পরিবহনের একটি বাসের চালক কাবিল মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই দিন ধরে শতশত বাস আটকে আছে, আমাদের অর্থনৈতিক অনেক ক্ষতি হচ্ছে।”
বেলা ১২টা থেকে বনানী এলাকার সাতটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিমানবন্দর সড়কে কাকলীর মোড়ে অবস্থান নেওয়ার ফলে বিমানবন্দর থেকে মহাখালী সড়কের উভয় পাশে তৈরি হয়েছে যানজট। বনানী থেকে গুলশান ও ডিওএইচএসের রাস্তাও বন্ধ হয়ে গেছে।
এই পয়েন্টে প্রাইম এশিয়া, সাউথ ইস্ট, রয়েল, প্রেসিডেন্ট, নর্দার্ন ও এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে বিক্ষোভ করছে।
বনানীর এই অবরোধের কারণে মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে ক্যান্টনমেন্ট হয়ে সৈনিক ক্লাব পর্যন্ত যানজট তৈরি হয়েছে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হায়দার চৌধুরী বলেন, “আগারগাঁও মোড় থেকে জ্যাম থাকায় রিকশা নিয়ে ভিতর থেকে ১০ নম্বরে এসেছি.. ক্যান্টনমেন্টটা ফাঁকা পাব ভেবেছিলাম। কিন্তু প্রায় আধাঘণ্টা ধরে গাড়ি একদম নড়ছে না।”
কোটা সংস্কারের আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক। তারা অকারণে রাস্তায় নামেনি। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ওদের। যদি ৫৬ শতাংশেরই কোটার মাধ্যমে চাকরি হয়, তাহলে মেধার মূল্যায়নটা কোথায়?”
মিরপুর ১০ থেকে সৈনিক ক্লাব পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তাটিতে প্রচণ্ড যানজট থাকলেও রাস্তার অপর পাশের চিত্র ভিন্ন।
দুপুরের পর মহাখালীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ওয়ারলেস রেলগেইটে সড়ক অবরোধ করলে মহাখালী থেকে গুলশানের পথে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তারা ব্যানার-প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ করছেন।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টার পর আগারগাঁও মোড়ে এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে অবস্থান নিলে রোকেয়া সরণি ও মিরপুর রোডের দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আহসানউল্লাহ ও সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নাবিস্কো মোড় অবরোধ করায় সাতরাস্তা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা কলেজ ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরা বেলা পৌনে ১১টার দিকে নিউ মার্কেট মোড়ে অবস্থান নিয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। ফলে ওই পথ দিয়ে মিরপুর-আজিমপুর রোডে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বরিশাল যাবেন বলে আজিমপুর থেকে রওনা দিয়েছিলেন সৌরভ। অবরোধের ফলে যানজট তৈরি হওয়ায় গুলিস্তান থেকে পায়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন সদরঘাটের উদ্দেশ্যে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “সরকার ছাত্রদের সাথে সমঝোতা করে আন্দোলনটা যাতে আর দীর্ঘ না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।”
আয়েশা আক্তার অসুস্থ বাচ্চাকে নিয়ে রামপুরা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছেন সকাল ১০টায়। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি অসুস্থ বাচ্চা নিয়ে রওনা দিয়েছি সকাল ১০টায়, কিন্তু মাত্র তাঁতীবাজার পৌছালাম। কোন বাস বা গাড়ি না পেয়ে কিছুটা রিক্সায় আর পায়ে হেঁটে এ পর্যন্ত এসে আমি নিজেও অসুস্থ হয়ে গেছি।
“আমার ঢাকায় ওরকম কোন আত্মীয় নাই। আমার যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে এর দায়ভার কে নেবে?”
মাওয়ার উদ্দেশ্যে গুলিস্তান থেকে স্বাধীন বাসে রওনা করেছেন আশরাফুল ইসলাম। যানজটের কারণে দুইবার টিকেট পরিবর্তন করেও এখনো ঢাকা ছাড়তে পারেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।