বিজ্ঞানে অনাগ্রহ দূরে মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ

স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহ কম থাকায় তা দূর করতে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ এসেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2018, 07:27 PM
Updated : 20 March 2018, 07:27 PM

মঙ্গলবার ঢাকায় ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উত্তরণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এই পরামর্শ আসে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ ফ ম রুহুল হক বলেন, “এলাকায় গেলে এখন অনেকে বলে স্কুলে ভালো ল্যাব করে দিতে। এর থেকে মানুষের উপলব্ধি বোঝা যায়।

“আবার অনেক জায়গায় কিন্তু বিজ্ঞান শাখায় শিক্ষার্থী কম। কারণ জানতে চাইলে তারা বলে, খরচ বেশি। আবার ভালো ল্যাব না থাকর বিষয়টিও উঠে আসে। কারণ ল্যাব ভালো না হলে নম্বর ভালো আসে না। এসব বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে।”

২০১৫ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এক প্রতিবেদনে সংসদীয় কমিটিকে জানায়, দেশে স্কুল শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিষয়ে লেখাপড়া আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

সংসদীয় কমিটি ওই সময় শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমুখী করা এবং বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে।

বাংলাদেশ ব্যুরো অব এডুকেশন ইনফরমেশন অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকসের (ব্যানবেইস) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা দেশে অষ্টম শ্রেণিতে ২০০৯ সালে শিক্ষার্থী ছিল ১৪ লাখ ৫১ হাজার। এদের মধ্যে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান নেয় দুই লাখ ৪০ হাজার, যা মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৯ শতাংশ।

তারাই ২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। ওই বছর বিজ্ঞানের পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৩৮ হাজার।

২০১২ সালে নবম শ্রেণিতে পদার্থবিদ্যায় ২ লাখ ৬৮ হাজার, রসায়নে ২ লাখ ৬৯ হাজার, জীববিদ্যায় ২ লাখ ৫৬ হাজার এবং উচ্চতর গণিতে ১ লাখ ৫৪ হাজার শিক্ষার্থী ছিল।

ওই বছর ইতিহাস ও ভূগোলে প্রায় পাঁচ লাখ, বাণিজ্য নীতিতে ৩ লাখ ৯৭ হাজার শিক্ষার্থী ছিল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারে ওই সেমিনারে পরে বক্তব্য দিতে উঠে মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, “অনেকে বলেন বিজ্ঞান চর্চা হচ্ছে না। প্রত্যেক বাবা-মার হাতে তো বিজ্ঞানের যন্ত্রই আছে-মোবাইল ফোন। তাহলে কিভাবে বিজ্ঞান চর্চা হচ্ছে না?”

মন্ত্রী বলেন, “১৬ কোটি মানুষের যে শক্তি সেটা বুঝতে হবে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার এটা কিন্তু বাঙালির মাথা থেকেই এসেছে। বাংলাদেশ কোথায় যাবে কেউ বলতে পারে না। গতকাল কোথায় ছিলাম আর কোথায় আছি।”

জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি দিয়েছে। শুক্রবার এই সংক্রান্ত চিঠি হস্তান্তর করে তারা।

বিশ্ব ব্যাংকের বিবেচনায় নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পর জাতিসংঘের মাপকাঠিতেও বাংলাদেশের এই উত্তরণ ঘটল।

সেমিনারে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা বলতে গিয়ে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হক বলেন, “নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন নিয়ে অনেকে বলেন-এত টাকা খরচ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার দরকার কী? হ্যাঁ এটা ঠিক আরও কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। কিন্তু শুধু বিদ্যুৎ না নিউক্লিয়ার প্রযুক্তিতে যে আমাদের ছেলেমেয়েরা আসবে সেটাতো আমাদের অনেক উপরে নিয়ে যাবে।”

সচিব  আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান মো. আবদুল মোমিন। অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য কামাল উদ্দিন আহমেদ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুল করিম প্রমুখ।