বিয়ের পিঁড়িতে বসা হল না আলিফের

আর এক মাস পরেই ছেলের বিয়ে ঠিকঠাক করেছিলেন খুলনার মোল্লা আলিফুজ্জামানের মা; কিন্তু ইউএস-বাংলা এয়ালাইন্সের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় পড়ায় ভেঙে গেছে তার সেই স্বপ্ন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2018, 02:42 PM
Updated : 19 March 2018, 02:42 PM

নেপালে ওই বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ২৩ জনের লাশ সোমবার দেশে এলেও ছেলে আলিফের খোঁজ এখনও পাননি মনিকা পারভিন ও মোল্লা আসাদুজ্জামান।

নিহতদের মধ্যে আলিফের থাকার কথা নিশ্চিত করলেও তিন বাংলাদেশির লাশ এখনও শনাক্ত হয়নি। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা হবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

যে ২৩ জনের লাশ শনাক্ত হয়েছে, তাদের লাশ ঢাকায় আনার পর সোমবার বিকালে ঢাকায় আর্মি স্টেডিয়ামে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

খুলনা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আর্মি স্টেডিয়ামে ছুটে এসেছিলেন মনিকা ও আসাদুজ্জামান।

তালিকায় ছেলের নাম না পেয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন মনিকা।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুর্ঘটনার দিন ১২ মার্চ সকালে যশোর থেকে বিমানে ঢাকা আসেন আলিফ।

“নেপালে রওনা হওয়ার আগে আমাকে ফোন করে বলে- ‘মা আমি ছয় দিনের মধ্যেই ফিরে আসব’। আমি বলেছিলাম, নেপাল নেমে সাথে সাথে একটা সিম কিনে আমাকে ফোন দিস। দুর্ঘটনার পর শুনেছিলাম আলিফ বেঁচে আছে। আর এখন লাশটিও পাচ্ছি না।”

নিজের ফেইসবুকে এটাই ছিল মোল্লা আলিফুজ্জামানের তোলা শেষ ছবি; ১২ মার্চ যশোর থেকে বিমানে ঢাকা রওনা হওয়ার আগে এই ছবি তোলা হয়েছিল

আসাদুজ্জামান জানান, দুর্ঘটনার পর যে কয়েকজনকে উদ্ধার করার ছবি টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছিল তাদের একজনের গায়ের গেঞ্জির সঙ্গে আলিফের গেঞ্জির মিল ছিল। তাই তারা ভেবেছিলেন যে আলিফ বেঁচে আছেন।

স্বজনরা জানান, খুলনা বিএল কলেজে মাস্টার্স পড়ুয়া আলিফ আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ঠিকাদারি করতেন।

শখের বসে বিদেশে ঘুরতে যেতেন আলিফ। ভারত, বাহরাইন, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশ ঘুরে এসেছেন তিনি।

মনিকা বলেন, তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলেকে বিয়ে করিয়েছেন। আগামী এপ্রিলে আলিফের বিয়ে ঠিক করেছিলেন।

“কিন্তু তার আগেই ছেলে দুনিয়া ছেড়ে গেল,” আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন তিনি।

মনিকা বলেন, “আলিফ আমাকে বলেছিল- ‘আম্মা, চলেন আপনাকে ওমরাহ করাই’। আমি বলেছি না, আগে তোর বিয়ের কাজ শেষ হোক। তারপর একসাথে বড় হজ করব। কিছুই তো হলো না।”