প্রচলিত ব্যবস্থায় প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ সম্ভব নয়: আইটিমন্ত্রী

প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়ন থেকে পরীক্ষার্থীর হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত বহু মানুষের সম্পৃক্ততা থাকায় এই পদ্ধতির পরিবর্তন ছাড়া প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ সম্ভব নয় বলে মনে করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2018, 05:11 PM
Updated : 14 Feb 2018, 06:01 PM

এর সমাধান হিসেবে পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করার পক্ষে তিনি।

প্রশ্নফাঁসের জন্য ফেইসবুক, ইন্টারনেটের ওপর দায় চাপানো ঠিক নয় মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “এই ধরনের একটা ধারণা আমাদের মধ্যে জন্ম নিয়েছিল যে, ফেইসবুকে প্রশ্ন ফাঁস হয়, ইন্টারনেট প্রশ্ন ফাঁস করে। বিষয়টা খুবই সিম্পল। না ফেইসবুক, না ইন্টারনেট, না হোয়াটসঅ্যাপ প্রশ্ন ফাঁস করে, প্রশ্ন ফাঁস হয় মানুষের হাতে।

“মানুষের হাতে যখন প্রশ্নটা ফাঁস হয়, আমাদের ইন্টারনেটের উপর দায়টা আসে। কারণ ইন্টারনেট আমরা ব্যক্তিগত তথ্য থেকে রাষ্ট্রীয় তথ্য প্রচার করার জন্য ব্যবহার করি। প্রচারের দায়টা যদি প্রযুক্তির ঘাড়ে দিতে চান তাহলে এই দায়টা হয়ত তাকে দেওয়া যেতে পারে।”  

গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক ও অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষার ধারাবাহিকতায় চলমান এসএসসিতে প্রতিটি পরীক্ষার সকালে প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ছে ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

নানাভাবে চেষ্টা করেও স্কুল কলেজের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে পারছে না সরকার। ফাইল ছবি।

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে সরকার পরীক্ষার সকালে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফেইসবুক বন্ধ ও ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েও সরে এসেছে।

তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী এখন বলছেন, প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে ইন্টারনেট বন্ধ করা অথবা ফেইসবুক বন্ধ করা সমাধান নয়।

বুধবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই অবস্থান জানান তিনি।

মোস্তাফা জব্বার বলেন “প্রচলিত পদ্ধতিতে আমরা যে পরীক্ষা গ্রহণ করি, প্রশ্ন যেভাবে প্রস্তুত করি এবং যেভাবে প্রশ্ন করা থেকে শুরু করে পরীক্ষার্থী পর্যন্ত পৌঁছায়- এই প্রক্রিয়াটি এই রকম এবং দীর্ঘ দিন যাবৎ এমনভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে যে এত সব মানুষ এত স্তরে যুক্ত আছে, এটি যে কারও জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ যে পুরো প্রক্রিয়াটার মধ্যে একেবারে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বিধান করা।”

এই কাজকে দুরূহ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কারণ একজন, দুজন, চারজন, পাঁচজন মানুষ থাকলে সেটি পাহারা দেওয়া সহজ, কিন্তু এত মানুষের সংশ্লিষ্টতায় নিরাপত্তা বিধান করা তত সহজ না।”

পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, “বস্তুতপক্ষে আমি যেটি বিশ্বাস করি সেটি হচ্ছে, যে পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়, যে পদ্ধতিতে প্রশ্ন তৈরি হয় এবং আমাদের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার চেষ্টা করি, আমার মনে হয় এটা নতুন করে ভাবার সময় হয়েছে। নতুন করে যদি না ভাবি তাহলে এই প্রচলিত পদ্ধতি, আমাদের আসলে শত শত বছরের প্রাচীন পদ্ধতি ডিজিটাল যুগে অচল হতে পারে।

“আর যদি ডিজিটাল প্রযুক্তির কথা বলেন, নিঃসন্দেহে ডিজিটাল প্রযুক্তি আপনাকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়ার মতো উপায় আছে। সেটা আমাদের হাতে আছে। প্রয়োগ করাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে। কারণ শিক্ষার্থী তো দুই-চারজন না, লাখ লাখ শিক্ষার্থী, লাখ লাখ প্রতিষ্ঠান, লাখ লাখ শিক্ষক, এদের মধ্য থেকে আমরা প্রযুক্তিগতভাবে এ রকম ব্যবস্থা করতে পারি যে, প্রযুক্তিগত ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে প্রাকটিক্যালি কারও পক্ষে প্রশ্ন ফাঁস করার কোনো সুযোগই থাকবে না।”

পরীক্ষার সকালে বিভিন্ন ফেইসবুক পেইজ ও গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ছে প্রশ্নপত্র

ফেইসবুকে প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, “রিয়েল আইপি ঠিকানা থাকলে সহজে শনাক্ত করা যায়, কিন্তু ভিপিএন ব্যবহার করলে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যাবে।

“ফেইসবুকের সাথে সরাসরি এমওইউ না থাকায় সরাসরি যোগাযোগ নেই। আমাদের এরইমধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু ওই অ্যাড্রেসটা পেতে আমাদের যে সময়টা দরকার, সেই সময়টুকুর মধ্যে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে যায়।”

বাংলাদেশ ২০০৯ সালে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে প্রবেশের পর এখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যায় ‘বিস্ফোরণ’ ঘটলেও যে পরিমাণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে উঠা উচিত ছিল তা হয়নি বলে জানান তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী।

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা তিন দিক থেকে কাজ করছি। বিটিআরসি, আইসিটি বিভাগ ও পুলিশ বাহিনী কাজ করছে। আমরা এরইমধ্যে একটা সমন্বয় গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। যে অবস্থাটা যাচ্ছে এই অবস্থাটাকে যাতে প্রকৃত সমাধানের জায়গায়…  এটা কেবল প্রশ্ন ফাঁসের নিরাপত্তার বিষয় নয়, বস্তুতপক্ষে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পুরো ইন্টারনেট ব্যবস্থাটাকে নিরাপদ করা।”

অনুষ্ঠানে ডাক বিভাগের পক্ষ থেকে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮’ উপলক্ষে ১০ টাকা ও ৫০ টাকা মূল্যমানের দুটি স্মারক ডাক টিকেট ও একটি স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও ডেটা কার্ড প্রকাশ করা হয়।

এছাড়া ডাক বিভাগ ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুশান্ত কুমার মণ্ডল জানান, এ চুক্তি অনুসারে জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্টকার্ড উপজেলা নির্বাচন অফিসে পৌঁছে দেবে ডাক বিভাগ।

এ সময় টেলিযোগাযোগ বিভাগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।