সোমবার বিকালে বাংলা একাডেমিতে সাহিত্য সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপ্রধান।
বিকাল ৩টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন প্রণব। মঞ্চে আসীন হয়ে তিনি কৃতাঞ্জলিপুটে গ্রহণ করেন অভ্যাগতদের সংবর্ধনা।
প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, “যুগ যুগ ধরে মানব সভ্যতার ইতিহাস এ কথা বলে গেছে যে হিটলার, মুসোলিনিরা নয়, সভ্যতার ইতিহাস নির্মাণ করে গেছেন প্রফেট, ক্রাইস্ট, বুদ্ধা। দিগ্বিজয়ী বীরেরা নয়, সভ্যতার ইতিহাসের দিক নির্মাণ করেছেন লেখক-কবি-সাহিত্যিক তথা শিল্পীরা।
“পরীক্ষা পাসের জন্য দিগ্বিজয়ী বীরদের নিয়ে পড়াশোনা করা যায়, পাসের পর তা বেমালুম ভুলে যাই। কিন্তু শিল্পীর ছবি, কবির কবিতা বা প্রিয় উপন্যাস কখনো ভোলা যায় না কি? যে গান, সানাই বা সরোদের সুর আমাদের প্রিয়, তা কখনও ভুলতে পারি আমরা?”
নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজনে এই সাহিত্য সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাওয়ার কথাও জানান সম্মেলনের সাবেক সভাপতি প্রণব।
“আমি তো পাঠক, একজন দর্শক। আমি স্রষ্টা নই, সৃষ্টিকর্ম তো আমার নেই। এই আন্তর্জাতিক সাহিত্যের মহামেলায় আমার কাজটা কী হবে? বীরভূমের গ্রামের ভাষায় রাজমিস্ত্রীদের সিমেন্ট, বালু, মসলা ইত্যাদি এনে দেওয়া লোকদের বলা হয় যোগাই। এই সম্মেলনে আমার কাজটা এখানে অনেকটা যোগাইয়ের মতো।”
“কিন্তু যেটা হল, রাষ্ট্রপতি ভবনে আধুনিক ভারতবর্ষের প্রচুর কাগজপত্র, অনেক দুষ্প্রাপ্য গোপনীয় রেকর্ড, পড়বার জন্য প্রচুর উপাদান পেয়ে গেলাম। এসব পড়তে গেলে তো এক প্রেসিডেন্সিয়াল টার্মে হবে না, তিনটা টার্ম লাগবে। তার আগেই ঈশ্বরের সমন এসে যাবে। আমি ভাবলাম, যতটা পারা যায়, আমি পড়ব।”
মানুষে-মানুষে হিংসা-দ্বন্দ্ব, জাতিগত সংঘাত, সন্ত্রাসবাদের বিস্তারে আতঙ্কিত হন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তার ভাষ্য, পরিবেশ দূষণের চেয়েও মানুষের চিন্তা-ভাবনা-মননের দূষণের ভয়াবহতা ‘আরও বড়’।
হিংস্রতা প্রতিহত করতে জাতিসংঘ বা আন্তরাষ্ট্রীয় কোনো সম্মেলন থেকে সমাধান আসবে না বলেও মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, “ভয়াবহ এই দূষণের হাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব স্রষ্টাদের। সাহিত্যিক, কবি, লেখকরা নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করবে।”
লেখক-সাহিত্যিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আসুন এই সংকল্প করি, ভবিষ্যত প্রজন্মকে আমরা হিংস্রতার সব বিষবাষ্প থেকে বাঁচাব। এই হোক আজকের অঙ্গীকার।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
এসেছিলেন ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সংসদ বিষয়কমন্ত্রী সরযু রাই, চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কবি কামাল চৌধুরী ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।