কালশীতে রাস্তার উপর উঠছে আওয়ামী লীগের দালান

ঢাকার পল্লবীর কালশীতে একটি রাস্তা পুরোপুরি দখল করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের উদ্যোগে উঠছে একটি দালান, যা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে স্থানীয়দের।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2017, 12:49 PM
Updated : 18 Dec 2017, 02:05 PM

রাস্তার উপর দলীয় কার্যালয় নির্মাণে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার সায় রয়েছে বলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন। তবে ইলিয়াস মোল্লা বলছেন, তিনি এরকম কোনো নির্দেশ দেননি।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলের বলেছেন, রাস্তাটি নির্মাণে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন দরপত্র আহ্বান করতে যাচ্ছে, সেটা হলেই ওই ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।

কালসি সড়কের পাশে শহীদ জিয়া মহিলা কলেজের দেয়ালঘেঁষা ওই রাস্তা নিয়ে পেছনের আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের যাতায়াত। ওই রাস্তার মুখে দ্বিতল ভবন নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ৯১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা।

রোববার গিয়ে দেখা যায়, ভবনের নিচ তলার নির্মাণ কাজ শেষ, দোতলার পিলারও উঠে গেছে। ভবন নির্মাণের জন্য বেশ কিছু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ভবনের পেছনের অংশে বেশ কয়েকটি বড় বড় গাছ কেটে নিচ্ছেন শ্রমিকরা।

এই ভবন নির্মাণের উদ্যোগে যুক্ত আছেন ঢাকা উত্তরের ৯১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি তামিজ উদ্দিন চৌধুরী মন্টু।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাস্তার কথা বলা থাকলেও বাস্তবে এখানে কোনো রাস্তা ছিল না।”

তবে স্থানীয়রা বলছেন, ওইখানে ২০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা ছিল, যার দৈর্ঘ্য ৯০ ফুট। রাস্তার পাশে একটি নালা রয়েছে, নালার অন্য পাড়ে একই ধরনের আরেকটি রাস্তা।

গুগল মানচিত্রে ২০১৩ সালে তোলা ওই স্থানটির ছবি

স্থানীয়দের বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেনের কথায়ও।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আবাসিক এলাকার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে সেখানে রাস্তা নির্মাণের জন্য জায়গাটা রাখা হয়েছে।”

ভবন নির্মাণের উদ্যোক্তারা বলছেন, ওই রাস্তার ৭ ফুট ইতোমধ্যেই কলেজের দখলে চলে গেছে। বাকি জায়গাও পতিত অবস্থায় ছিল।

ভবনের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মন্টু বলেন, “বখাটে, মাদকাসক্তরা এখানে আড্ডা দিত, স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের বিরক্ত করত। বারবার বলেও তাদের সরানো যাচ্ছিল না। মহিলা কলেজের পাশে এধরনের একটা অসামাজিক পরিবেশ দূর করতে এলাকার জন্য এই কার্যালয় ও ভবন উপকারেই আসবে।

“বখাটেদের উৎপাত দূর করতে রাস্তার বাকি অংশও আমরা জাল/নেট দিয়ে ঘেরাও করে দেব। ফুলগাছ লাগিয়ে এর সৌন্দর্য বাড়াব।”

তবে তার এই যুক্তিও গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না স্থানীয়দের কাছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার এক দোকানি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে বখাটেপনা তো করে দলের কর্মীরাই। আগে মহিলা কলেজের সামনে তারা আড্ডা বসাত। এখন কলেজের পাশে স্থায়ী কার্যালয় বানাতে শুরু হয়েছে। তাহলে পরিস্থিতি তো আরও খারাপ হবে।”

ওই ভবন নির্মাণের কারণে পাশের খালটিও সরু হয়ে আসছে, যা পয়ঃনিষ্কাশনে সমস্যা তৈরি করবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।

ভবন নির্মাণ অর্ধেক এগিয়ে গেলেও এখনও সিটি করপোরেশনের কোনো অনুমতি না নেওয়ার স্বীকারোক্তি এসেছে আওয়ামী লীগ নেতা মন্টুর কথায়।

“সিটি করপোরেশনের অনুমতি নেওয়া বাকি আছে। আলোচনা করে সেটাও নিয়ে নেব,” বলেন তিনি। তবে ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাজ্জাদ বলেছেন, “কিছুদিনের মধ্যে ওই রাস্তা নির্মাণের টেন্ডার হওয়ার কথা। টেন্ডার হলে আমরা বুলডোজার এনে এই কার্যালয় ভেঙে দেব।”

অনুমতি ছাড়াই এই ধরনের ভবন গড়ে তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, “ক্ষমতাসীন লোকজন অনেক কিছুই করে। এটা সব জায়গায় হয়ে থাকে। এখানে কারও কিছু করার থাকে না। তবে আমরা চেষ্টা করব, জনগণের রাস্তা যাতে জনগণের কাজে লাগে।”

ভবনের নিচতলার কাজ শেষ, দোতলার পিলারও উঠে গেছে

ছায়াদার গাছ কেটে ১৩ ফুট প্রস্থ ও ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের ভবনটি দলীয় নেতা-কর্মীদের অনুদানে হচ্ছে বলে দাবি করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। দুই বছর আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লাই তা নির্মাণের নির্দেশ দেন বলে তাদের দাবি।

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাস্তা দখল করে কোনো দলীয় কার্যালয় নির্মাণের অনুমোদন তিনি দেননি।

“আমি দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলাম। গত ১৪ ডিসেম্বর এসেই বিজয় দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যস্ত। তাই ৯১ নম্বর ওয়ার্ডের ওই কার্যালয় নির্মাণ সম্পর্কে জানা নেই। আমি এখনই খোঁজ নিচ্ছি। এটি যদি রাস্তা দখল করে নির্মাণ করা হয় কিংবা মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের বিঘ্ন করে তাহলে অবশ্যই ভেঙে ফেলতে বলব।”

এই প্রসঙ্গে ইলিয়াস মোল্লা বলেন, “বিএনপি আমল থেকে এই সমস্যাটার সূচনা। সেখানে বনফুল স্কুল নামে একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুল ছিল। স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন সেই স্কুলের জায়গায় জিয়ার নামে কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। আর স্কুলটাকে রাস্তা ও ফুটপাতের উপর ঠেলে দেয়। এভাবে তারা রাস্তাটা দখল শুরু করে।

“আমরা ক্ষমতায় আসার পর এই স্কুলটাকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগের অনুমোদন নিয়ে পাশের পার্কে নিয়ে যাই।”

ইলিয়াস মোল্লার বাবা হারুনুর রশীদ মোল্লা এক সময় ওই এলাকায় বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন। পরে তার ভাই এখলাসউদ্দিন মোল্লাও সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে ইলিয়াস মোল্লা ওই এলাকায় সংসদ সদস্য।