মোবাইল কোর্টে আইনজীবীর সাজা: এসি ল্যান্ডকে তলব হাই কোর্টের

দিনাজপুরের বীরগঞ্জে কক্ষে বসা নিয়ে বাগবিতণ্ডার জের ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জ্যেষ্ঠ এক আইনজীবীকে সাজা দেওয়ার ব্যাখ্যা দিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিরোদা রানী রায়কে তলব করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2017, 10:48 AM
Updated : 17 Dec 2017, 11:37 AM

গত ১৪ ডিসেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকের প্রকাশিত খবর আদালতের নজরে আনলে রোববার বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেয়।

বিরোদা রানী এখন কুড়িগ্রামের ভুড়ুঙ্গামারীতে কর্মরত আছেন। ঘটনার সময় তিনি দিনাজপুরের বীরগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছিলেন।

আগামী ২৭ ডিসেম্বর তাকে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। ওই দিন ভুক্তভোগী আইনজীবী নিরোদ বিহারী রায় ও লইয়ারস ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের সম্পাদক ড. বদরুল হাসান কচিকেও থাকতে বলেছে আদালত।

ওই প্রতিবেদনটি প্রথমে লইয়ারস ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমে প্রকাশিত হয়েছিল।

খবরটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মহিদুল কবির ও কাজী হেলাল উদ্দিন।

পরে কাজী হেলাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত মঙ্গলবার সকালে একটি নামজারির মামলায় শুনানি করতে গেলে জে্যেষ্ঠ আইনজীবী নিরোদ বাহারী রায়কে ৫০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক দিনের করাদণ্ড দেন বীরগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিরোদা রানী।

“নিরোদ বাহারী রায়কে সাজা দেওয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত। একইসঙ্গে আগামী ২৭ ডিসেম্বর এসি ল্যান্ডকে আদালতে হাজির হয়ে এ ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলেছে।”

সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিরোদা রানী রায়কে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে বলে এই আইনজীবী জানান।

খবরে বলা হয়, মো. সাহেব আলী নামের এক ব্যক্তির একটি জমির খারিজ আবেদনের (পুরাতন নাম বাতিল করা বা নামজারি) শুনানি ছিল গত মঙ্গলবার এসি ল্যান্ড অফিসে।

আবেদনকারীর পক্ষে মামলার শুনানিতে অংশগ্রহণের জন্য নিরোদ বিহারী যখন উপস্থিত হন, তখন এসি ল্যান্ডের কক্ষে আরেকটি মামলার শুনানি চলছিল। নিরোদ বিহারী নিজের পরিচয় দিয়ে ভেতরে বসতে অনুমতি চাইলে বিরোদা রানী তাকে বাইরে যেতে বলেন।

তখন ভেতরে বসে থাকা আরেক আইনজীবী ওয়ারিস উল ইসলাম এসি ল্যান্ডকে বলেন, ‘ম্যাডাম, আমরা আইনজীবীরা তো এভাবেই বসে থাকি।’

এ কথা শুনে এসি ল্যান্ড বলেন, ‘আপনি চুপ থাকুন।’ তাতে চুপ হয়ে যান ওয়ারিস উল ইসলাম।

তখন নিরোদ বিহারী এসি ল্যান্ডের কাছে এমন ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে দুজনের মধ্যে তর্কতর্কি শুরু হয়। এক পর্যায়ে এসি ল্যান্ড নিজের ক্ষমতাবলে নিজ কক্ষকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ঘোষণা করে দণ্ডবিধির ১৮৬ ধারা (সরকারি কর্মচারীর সরকারি কার্য সম্পাদনে বাধা দান) অনুযায়ী ওই আইনজীবীকে ৫০০ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে একদিনের কারাদণ্ড দেন।

সাজা দেওয়ার সময় এসি ল্যান্ড তার বক্তব্যে ‘আমি আমার ক্ষমতা দেখালাম, পারলে আপনি আপনার ক্ষমতা দেখান’ মন্তব্য করেন বলে ভুক্তভোগী ওই আইনজীবীর অভিযোগ।

পরে জেলা আইনজীবী সমিতি বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানালে তিনি তাত্ক্ষণিকভাবে এসি ল্যান্ড বিরোদা রানী রায়কে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় বদলি করেন।

এ ঘটনায় জেলা আইনজীবী সমিতি বৃহস্পতিবার থেকে দুই দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করে।