সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষমতায় এলে নামবে ‘ঘোর অমানিশা’

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সাম্প্রদায়িক-জঙ্গি শক্তিকে রুখে দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2017, 05:55 PM
Updated : 13 Dec 2017, 05:55 PM

বুধবার বিকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত ‘বিজয় উৎসব’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তারা।

মুক্তিযুদ্ধের ‘সপক্ষের শক্তিকে’ হটিয়ে আবারও যদি কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষমতায় আসে তাহলে দেশে ‘ঘোর অমানিশা’ নেমে আসবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন একজন।

‘৭ই মার্চ মুক্তি ও স্বাধীনতার ডাক বাংলার ঘরে ঘরে, ৭ই মার্চ সম্পদ আজ বিশ্ব মানবের তরে’- স্লোগানে চার দিনের এই ‘বিজয় উৎসব’ পালন করছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও এক মিনিট নীরবতা পালনের পর বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের শিল্পীদের কণ্ঠে জাতীয় সংগীত ও দেশাত্মবোধক গানে শুরু হয় উদ্বোধনী পর্বের আনুষ্ঠানিকতা।

সম্মিলিতভাবে এই উৎসব উদ্বোধন করেন নৃত্য ব্যক্তিত্ব লায়লা হাসান, আবৃত্তিশিল্পী কাজী মদিনা ও সংগীতশিল্পী কাননবালা সরকার।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি যেন কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক অভিযাত্রা অব্যাহত রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন হাসান আরিফ।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বুধবার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সপ্তাহব্যাপী বিজয় উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশনায় শিল্পীরা।

তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে রামেন্দু মজুমদার বলেন, “আসন্ন নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে হটিয়ে আবারও যদি কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষমতায় আসে তবে দেশে ঘোর অমানিশা নেমে আসবে।”

ফেইসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে পোস্ট দিয়ে তার দায় চাপিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের উপর হওয়া নিপীড়নের ঘটনায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন রামেন্দু মজুমদার।

তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে সরকার কোনো শক্ত অবস্থান নিয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই।”

পরে তিনি বলেন, “এ মুহূর্তে দেশে বড় সমস্যা হল সাম্প্রদায়িকতা যা থেকে জন্ম নিচ্ছে জঙ্গিবাদ। রাজনীতিতে বাড়ছে ধর্মের অপব্যবহার। এটা রুখে দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের ধর্মীয় সংখ্যালঘু, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিৎ করতে হবে।”

উৎসবের ঘোষণাপত্রে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শত্রুরা স্বাধীন রাষ্ট্রকে ব্যর্থ করতে একের পর এক জঙ্গি হামলার মাধ্যমে রাষ্ট্রটিকে বিকল করার ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে।

“কিন্তু গৌরবের সাথে বলছি, বাংলাদেশ এই ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত বাংলাদেশ কোনোদিনই এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না।”

উৎসবের উদ্বোধক লায়লা হাসান বলেন, “বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হলে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দীক্ষিত করতে হবে। বাঙালির হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে উদ্বুদ্ধ করে তাদের জানাতে হবে আমাদের অঙ্গীকার। তাদের নিয়েই আমরা প্রতিষ্ঠা করব বাংলা ও বাঙালিয়ানাকে।”

আলোচনা শেষে আবৃত্তি পরিবেশন করেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, একক সংগীত পরিবেশন করেন ফকির আলমগীর। সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন। পরে শব্দ নাট্য চর্চা কেন্দ্র পরিবেশন করে নাটক ‘বীরাঙ্গনার বয়ান’।

উৎসবের আয়োজকরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ছাড়াও ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর, রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতি সৌধ, দনিয়া মঞ্চ ও মিরপুর মঞ্চে একযোগে জোটের এই বিজয় উৎসবের কর্মসূচি শুরু হবে।