খালেদা ফেরায় বড় বিড়ম্বনায় বিমান যাত্রীরা

তিন মাস পর দেশে ফেরা খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে বিএনপি নেতাকর্মীরা রাস্তায় দাঁড়ানোয় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে বিমান যাত্রীদের।

ফয়সাল আতিকও কাজী মোবারক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2017, 04:20 PM
Updated : 18 Oct 2017, 04:20 PM

বুধবার বিদেশ যাত্রীদের অনেককে লাগেজ মাথায় হেঁটে পৌঁছাতে হয়েছে বিমানবন্দরে। আর বিদেশফেরত অনেককে গাড়িতে চেপে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে বিমানবন্দরের পার্কিংয়ে।   

বিএনপি চেয়ারপারসন আসবেন বলে বিকাল ৩টার পর থেকেই যাত্রী ছাড়া অন্য কাউকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢোকায় কড়াকড়ি আরোপ করেন নিরাপত্তারক্ষীরা। এতে স্বজনদের এগিয়ে দিতে আসা নিকটাত্মীয়রা বিমানবন্দরের ফটকের দুই পাশে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ফুটপাতে অবস্থান নেন, যাতে ওই এলাকায় সৃষ্টি হয় জনজটের।

বিকাল ৪টায় বিমানবন্দরে ঢোকার মুখে কথা হয় সৌদি আরবগামী নূল আলমের সঙ্গে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের রাত ১০টার ফ্লাইটের যাত্রী তিনি।

নূর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিকাল ৩টায় শ্যালককে সঙ্গে নিয়ে বিমানবন্দরের বাইরে পৌঁছে এক ঘণ্টা পর ভেতরে ঢুকতে পারছিলেন তিনি।

কুমিল্লার চাঁন্দিনা উপজেলার বাসিন্দা চন্দন কুমার জানান, তার মালদ্বীপ প্রবাসী ভগ্নিপতি শুভাশিষ বিকাল ৪টায় বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তিনি নির্ধারিত মাইক্রোবাসে চড়লেও প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বিমানবন্দরের পার্কিংয়েই বসে আছেন।

“আমরা বুঝতে পারিনি আজকে খালেদা জিয়া আসবেন। এখন আর কতোক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে কে জানে। একটা ঝামেলার মধ্যে পড়ে গেলাম।”

বিএনপি নেতাকর্মীদের অবস্থানের কারণে বিকাল ৪টার দিকে বিমানবন্দর থেকে মহাখালীমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আবার বিমানবন্দরের সামনের চত্বরে দলটির নেতাকর্মীদের অবস্থানের কারণে ওই দিকেও গাড়ি যেতে পারছিল না।

নির্ধারিত সময় বিমানবন্দরে পৌঁছানোর তাড়ায় সড়কে গাড়ির মধ্যে অনেকক্ষণ আটকে থাকার পর মালপত্র নিয়ে হেঁটেই রওয়ানা হন যাত্রীরা।

কাঁধে ট্রাভেল ব্যাগ নিয়ে বিমানবন্দরের দিকে এগোচ্ছিলেন সৌদি প্রবাসী কুমিল্লার ইছারোল, বিকাল সাড়ে ৫টার সময় তার সঙ্গে বলাকা ভবনের সামনে দেখা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদকের।

ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, “রাত ৮টায় ফ্লাইট, সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে হবে। রাস্তার যে অবস্থা গাড়িতে বসে থাকলে আর বিদেশে যাওয়া হবে না, তাই বিশ্বরোড থেকে হেঁটে এসেছি।”

বিমানবন্দরের মুখে কথা হয় সৌদি আরবগামী আরেক যাত্রী পাবনার মিজানুর রহমানের সঙ্গে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“ভাই কথা বলার সময় নাই। দুই ঘণ্টা হেঁটে বিমানবন্দরের কাছে এসেছি। এই অবস্থায় আপনার সাথে কী কথা বলব? আমি তো বিএনপির এই তামাসা দেখতে আসি নাই, তাই মনে এত রঙও নাই।”

সৌদি আরব যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে আসা লাকসামের খুরশেদ আলম জানান, আগের দিন বাড়ি থেকে ঢাকা এসে মহাখালীতে বড় ভাইয়ের বাসায় ছিলেন, যাতে সময়মতো বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারেন।

“লাকসাম থেকে আসতে চার ঘণ্টা লাগলেও মহাখালী থেকে এখানে আসতে আরও বেশি সময় লেগে গেল।”

ঢাকা সেনানিবাসের স্টাফরোডের সামনে থেকে ভাইকে নিয়ে হেঁটে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “খালেদা জিয়ার সংবর্ধনার জন্য আমরা বিপদে।”

বিএনপি নেত্রীর ফেরা উপলক্ষে নেতাকর্মীদের অবস্থানে বিমানবন্দর সড়কে যানজটের খবর জেনে কয়েক ঘণ্টা আগেই রওয়ানা দিয়েছেন অনেকে। তাদের একজন ওমান প্রবাসী জাহিদুল ইসলাম।

বাগেরহাটের এই যুবক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর বলেন, “আমরা তিন ভাই বনানী থেকে হাঁটতে হাঁটতে এই বলাকা ভবনের সামনে এসে বসে আছি। বসে বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছি।

“রাত ১০টায় ফ্লাইট। রাস্তায় জ্যাম শুনে আগেই আমরা হেঁটে চলে এসেছি।”

সৌদি আরব থেকে ফেরা শ্যালককে নিতে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থেকে স্বজনদের নিয়ে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে এসেছিলেন আবুল হোসেন।

তিনি জানান, তার শ্যালক পৌঁছেছেন বিকাল ৩টায়। তিনি ওখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।

এদিকে বিকাল ৫টার সময় খিলক্ষেতে লো মেরিডিয়ান হোটেল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন তারা।

“মহাখালী থেকে যানজট শুরু হইছে। ভাবসিলাম ৩টার আগেই পৌঁছাইয়া যামু। কিন্তু এমুন জ্যাম পড়ছি। কোনসোম যাই ঠিক নাই। ঐদিকে শালা বারবার ফোন করতাসে,” বলেন আবুল।

বিমানবন্দরে প্রবেশের কড়াকড়ির খাড়ায় পড়তে হয়েছে বিমানের টিকেট ক্রেতাদেরও। চট্টগ্রামে যাওয়ার টিকেট কিনতে বিকাল ৩টায় বিমানবন্দরের সামনে এসে নিরাপত্তাকর্মীদের বাধায় ঢুকতে পারছিলেন না উত্তরার বাসিন্দা আয়েশা খানম।

“এখন থাকব নাকি ফিরে যাব, তা বুঝতে পারছি না,” বলেন তিনি।